‘সংবিধানের ওপর গুরুতর আক্রমণ’, পদত্যাগ করলেন পাকিস্তানের দুই বিচারপতি

সংবিধানে ২৭তম সংশোধনী আনার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতের দুই জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। বিচারপতি মনসুর আলী শাহ ও বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ এই সংশোধনীকে ‘সংবিধানের ওপর গুরুতর আক্রমণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই ঘটনায় দেশটির বিচার বিভাগে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিচারপতি মনসুর আলী শাহ তার ১৩ পৃষ্ঠার পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, ‘এই সংশোধনী পাকিস্তানের সংবিধানের ওপর গুরুতর আক্রমণ এবং এটি সুপ্রিম কোর্টকে ভেঙে দিয়েছে ও বিচারব্যবস্থাকে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনী পাকিস্তানের সাংবিধানিক গণতন্ত্রের হৃদয়ে আঘাত করেছে। আমি এমন একটি আদালতে বসে আমার শপথ পালন করতে পারি না, যা তার সাংবিধানিক ভূমিকা থেকে বঞ্চিত। তাই পদত্যাগই আমার শপথের প্রতি সম্মান প্রকাশের একমাত্র সৎ ও কার্যকর উপায়।’

অন্যদিকে, বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ তার পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন, ‘যে সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছিলাম, সেটি আর অবশিষ্ট নেই। নতুন ভিত্তি স্থাপিত হচ্ছে তার সমাধির ওপর। এখন যা আছে তা কেবল তার ছায়ামাত্র।’ তিনি জানান, যে শপথ তিনি গ্রহণ করেছিলেন, সেই শপথের প্রতি দায়বদ্ধ থেকেই তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

সংবিধানের ২০৬(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, উভয় বিচারপতিই তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন।

এদিকে, পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি ইয়াহিয়া আফ্রিদি শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) এই সংশোধনী নিয়ে আলোচনার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আদালত অধিবেশন আহ্বান করেছেন। একাধিক বিচারপতির চিঠি এবং আইনজীবী সমিতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের অনুরোধের পর এই বৈঠক ডাকা হয়।

এর আগে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি জাতীয় পরিষদ ও সিনেটে পাস হওয়া ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনী বিলে স্বাক্ষর করেন, যার ফলে এটি এখন সংবিধানের একটি অংশে পরিণত হয়েছে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে পাকিস্তানে একটি ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত গঠিত হয়েছে, যা সাংবিধানিক বিষয়ে চূড়ান্ত কর্তৃত্বের অধিকারী হবে। এর ফলে সুপ্রিম কোর্ট কার্যত এই নতুন আদালতের অধীনস্থ হয়ে পড়বে।

এই সংশোধনীকে কেন্দ্র করে বিচার বিভাগ ও আইনজীবী মহলে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। সমালোচকদের মতে, এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে খর্ব করবে এবং নির্বাহী বিভাগের প্রভাব বাড়াবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থায় এই পদক্ষেপ এক নতুন সংকটের সূচনা করতে পারে, যা দেশটির সাংবিধানিক ভারসাম্য ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।