পশ্চিম তীরে মসজিদে আগুন: ‘জঘন্য অপরাধ’ বলল ফিলিস্তিন

দখলকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান সহিংসতার মধ্যেই একটি মসজিদে অগ্নিসংযোগ করেছে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা। ফিলিস্তিনের ধর্ম মন্ত্রণালয় এই ঘটনাকে ‘জঘন্য অপরাধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। বৃহস্পতিবার ভোরের এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে আল জাজিরা জানায়, সালফিতের কাছে দেইর ইস্তিয়া গ্রামের হাজ্জা হামিদা মসজিদে আগুন দেওয়া হয়। ফিলিস্তিনিরা সেখানে পৌঁছে মসজিদের ভেতরে আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়া দেখতে পান। আগুনে পবিত্র কোরআনের একাধিক কপি পুড়ে যায় এবং মসজিদের দেয়ালে ফিলিস্তিনিবিরোধী বর্ণবাদী স্লোগান লিখে দেওয়া হয়। ফিলিস্তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এটি দখলকৃত অঞ্চলে মুসলিম ও খ্রিষ্টান পবিত্র স্থানগুলোর ওপর ইসরায়েলের ধারাবাহিক বর্বরতার আরেকটি প্রমাণ।’

একই দিনে দক্ষিণ হেবরনের বেইত উম্মার শহরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযানে দুই ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াফা সংবাদ সংস্থা।

এদিকে, পশ্চিম তীরে জলপাই মৌসুমকে ঘিরে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা নজিরবিহীন মাত্রায় পৌঁছেছে। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, ১ অক্টোবরের পর থেকে জলপাই সংগ্রহকে কেন্দ্র করে অন্তত ১৬৭টি হামলা হয়েছে। এতে ১৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন এবং পাঁচ হাজার ৭০০টির বেশি জলপাই গাছ ধ্বংস করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের আড়ালে পশ্চিম তীরেও দখলদার ও সামরিক হামলা বেড়েছে। একই সঙ্গে ইসরায়েলের কট্টর-ডানপন্থী সরকার দখলকৃত পশ্চিম তীরকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য চাপ দিচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, ‘ইসরায়েল ইতোমধ্যে সেখানে বাস্তবিক অর্থে দখল ও বর্ণবাদী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে।’

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর গত জুলাইয়ে সতর্ক করে বলেছিল, বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা অনেক ক্ষেত্রে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তা বা প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে ঘটছে। তাদের মতে, এসব হামলা পশ্চিম তীরে দখল সংহত করার একটি সমন্বিত কৌশল।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফান দ্যুজারিক বলেন, ‘উপাসনালয়ে এমন হামলা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।’ তিনি আরও জানান, দখলদার শক্তি হিসেবে বেসামরিক জনগণকে সুরক্ষা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ইসরায়েলের রয়েছে এবং এ হামলার সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

জর্ডান, জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড এই কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, শুধু নিন্দা যথেষ্ট নয়। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করাসহ বাস্তবমুখী পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, গাজায় দুই বছরের যুদ্ধে ইতোমধ্যে ৬৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সময়ে পশ্চিম তীরে দখলদারিত্ব ও সহিংসতা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।