পারমাণবিক প্রকল্পে ফিরছে দক্ষিণ আফ্রিকা, গবেষণায় জোর

দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প পুনরায় চালুর ঘোষণা দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। একইসঙ্গে বৈশ্বিক পারমাণবিক চুল্লির জ্বালানি বাজারে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে এবং অভ্যন্তরীণ দক্ষতা বাড়াতে দেশটির প্রধান গবেষণা কেন্দ্রগুলোও চালু করা হবে। রোববার রাজধানী প্রিটোরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান দেশটির জ্বালানি মন্ত্রী খোসিয়েনশো রামোকগোফা।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী রামোকগোফা বলেন, ‘একটি দেশ হিসেবে আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি না।’ অতীতের প্রতিবন্ধকতা এবং দক্ষ প্রকৌশলী হারানোর কথা স্বীকার করে তিনি জানান, দক্ষিণ আফ্রিকা জ্বালানি উন্নয়ন গবেষণাগারগুলো পুনরায় চালু করছে, পেবল বেড মডুলার রিঅ্যাক্টর (পিবিএমআর) কর্মসূচিকে পুনরুজ্জীবিত করছে এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের একটি নতুন প্রজন্ম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশনের (এনইসিএসএ) নেতৃত্বে এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে উল্লেখ করে রামোকগোফা বলেন, ‘আমরা দেশে পারমাণবিক কর্মসূচি এবং গবেষণা কার্যক্রম পুনর্গঠন নিশ্চিত করতে যাচ্ছি।’ তিনি আরও জানান, পারমাণবিক জ্বালানির পরিমাণ নির্ধারণকারী গবেষণাগার এবং হিলিয়াম পরীক্ষা কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো পুনরায় সক্রিয় করা হবে, যা পারমাণবিক গবেষণা ও জ্বালানি উন্নয়নে দক্ষিণ আফ্রিকাকে একটি প্রধান শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।

চীনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে উচ্চ-তাপমাত্রার চুল্লির জন্য শুধুমাত্র একটি দেশই জ্বালানি সরবরাহ করছে। চীন বিশ্বব্যাপী একটি প্রধান রপ্তানিকারক দেশ হলেও নতুন চুল্লি চালুর সঙ্গে সঙ্গে তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে হবে এবং উদীয়মান বৈশ্বিক ক্ষুদ্র মডুলার রিঅ্যাক্টর (এসএমআর) বাজারেও তাদের আধিপত্য বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে।

মন্ত্রীর মতে, ‘আমাদের নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে আমরাও এই ক্ষেত্রে আরেকটি প্রতিযোগী হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছি।’ তিনি যোগ করেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা এখন পারমাণবিক জ্বালানির ক্ষেত্রে তার যথাযথ স্থানে ফিরে যাচ্ছে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা পারমাণবিক খাতে একটি প্রভাবশালী ও অপরিহার্য শক্তি হয়ে উঠব।’

রামোকগোফা জানান, তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণের সময়কালে পিবিএমআর উন্নয়নে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রায় ১৬ বছর পিছিয়ে পড়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিদ্যমান প্রতিযোগীদের সঙ্গে অংশীদারত্ব প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি এনইসিএসএ বহুমুখী গবেষণা চুল্লির কাজ এগিয়ে নেবে। ২০২১ সালের মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুসারে, দক্ষিণ আফ্রিকা একটি বহুমুখী গবেষণা চুল্লি স্থাপনের দিকে এগোচ্ছে, যা মূলত কর্কট রোগের চিকিৎসাসহ বিভিন্ন গবেষণা ও চিকিৎসাক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়াবে।

তিনি আরও জানান, প্রিটোরিয়া ইতোমধ্যে এনইসিএসএ-কে ১২০ কোটি দক্ষিণ আফ্রিকান র‍্যান্ড (৭ কোটি ডলার) মূলধন সরবরাহ করেছে এবং দেশের অভ্যন্তরে ৫.২ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে পারমাণবিক সক্ষমতা বাড়াতে অন্যান্য অংশীদারদের যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে।

উল্লেখ্য, আফ্রিকার একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোবার্গ দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত।