হারেৎজ: ‘ইসরায়েলের ধ্বংস ঠেকাতে’ নতুন যুদ্ধের পথে নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের প্রভাবশালী গণমাধ্যম হারেৎজ দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সরকারের তীব্র সমালোচনা করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পত্রিকাটির মতে, নেতানিয়াহুর নীতির কারণে ইসরায়েল এখন ‘অভ্যন্তরীণ পতনের’ দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে এবং নিজের জবাবদিহি এড়াতে তিনি নতুন করে যুদ্ধের পথ বেছে নিচ্ছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা ও লেবাননে যুদ্ধ সম্প্রসারণের জন্য ইসরায়েল দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে। অথচ একই সময়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও শাসনব্যবস্থা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে, যা কার্যত ভেঙে পড়ার শামিল। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই অভ্যন্তরীণ ভাঙনের সুযোগ নিয়েই নেতানিয়াহু তার জবাবদিহি এড়িয়ে যাচ্ছেন।

পত্রিকাটি জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনা আটকে দেওয়ার লক্ষ্যে ইসরায়েল একই সঙ্গে গাজা ও লেবাননে বড় ধরনের অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যদি ‘দৃঢ় চাপ’ প্রয়োগ না করে, তবে ইসরায়েল এমন এক ‘নতুন বাস্তবতা’ তৈরি করতে পারে, যা শান্তি প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি অসম্ভব করে তুলবে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় হামলা বাড়িয়েছে, যেখানে বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে লেবাননে হিজবুল্লাহর বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানা হচ্ছে। হারেৎজ এই পদক্ষেপগুলোকে ‘পরিকল্পিত পরীক্ষা’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি মূলত বর্তমান সমঝোতার সীমা এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা কতদূর পর্যন্ত উত্তেজনা সহ্য করতে পারবেন, তা যাচাই করার একটি চেষ্টা।

গাজার ফিলিস্তিনি সূত্রগুলো সতর্ক করে জানিয়েছে, ইসরায়েল ভূখণ্ডটির পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে নতুন পরিস্থিতি তৈরির অজুহাত খুঁজছে। এর মাধ্যমে তারা দাবি করতে পারবে যে চুক্তিগুলো ভঙ্গ করা হয়েছে এবং অন্য পক্ষের ‘উস্কানিকে’ কারণ দেখিয়ে তারা আবারও পুরোদমে যুদ্ধে ফিরতে পারবে।

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, লেবাননে হামলাগুলোকে ইসরায়েলে একটি ‘অনিবার্য’ প্রতিক্রিয়া হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা দেশটির উত্তরাঞ্চলে একটি বড় যুদ্ধের আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

হারেৎজ লিখেছে, গত ৭ অক্টোবরের হামলার ধাক্কা এখনো ইসরায়েলি সমাজে তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে এবং নেতানিয়াহু সেটিকে তার রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। জীবিত বন্দিদের ফেরত আনা এবং বেশিরভাগ মরদেহ উদ্ধারের পর তিনি এখন ‘ইচ্ছামতো উত্তাপ বাড়ানো-কমানোর স্বাধীনতা’ পেয়েছেন। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে নেতানিয়াহু নিজেকে ‘মিস্টার সিকিউরিটি’ বা ‘নিরাপত্তার রক্ষাকর্তা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন, যিনি শত্রুর বিরুদ্ধে কঠোর হাতে প্রতিশোধ নিতে সক্ষম। অথচ তিনি দেশের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য দায়ী, সেই বিষয়টি তিনি সুকৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।

প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়েছে, এই দুর্যোগের জন্য লজ্জিত হওয়ার পরিবর্তে নেতানিয়াহু সেটিকে আরও উত্তেজনা তৈরির যুক্তি হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন।