‘সৃজনশীলতা বদলে দেবে এআই’, দোহা ফোরামে বললেন বিল গেটস

মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই বিশ্বজুড়ে সৃজনশীলতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৌলিক পরিবর্তন আনবে। দোহা ফোরাম ২০২৫-এ তিনি সতর্ক করে বলেন, যারা আগে এই প্রযুক্তি গ্রহণ করবে তারাই ভবিষ্যৎ গড়বে এবং আফ্রিকাকে এই দৌড়ে পিছিয়ে থাকলে চলবে না।

শনিবার দোহা ফোরামে বক্তৃতাকালে গেটস এআই-এর প্রভাবকে সর্বজনীন উল্লেখ করে একে ‘চিপ, বিদ্যুৎ বা উন্নত ওষুধের’ সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এর শক্তি বিদ্যমান ভিত্তিগুলোর প্রতিলিপি তৈরিতে নয়, বরং সমাজ কীভাবে তা প্রয়োগ করে তার ওপর নির্ভর করে। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা এটুকু বলতে পারি যে, যারা দ্রুত এতে যুক্ত হবে—সেখান থেকেই প্রচুর সৃজনশীলতা আসবে।’

বিল গেটস আরও বলেন, ‘যেহেতু আফ্রিকার জনসংখ্যা তরুণ, তাই এটি কীভাবে গড়ে তোলা যায় এবং কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে তাদের নতুন ধারণা নিয়ে এগিয়ে আসার আনুপাতিক হার বেশি থাকবে।’

গেটস উল্লেখ করেন যে এআই চলচ্চিত্র, ফটোগ্রাফি থেকে শুরু করে লেখালেখি ও ডিজাইনের মতো শৈল্পিক ও সৃজনশীল শিল্পগুলোকে নতুন রূপ দেবে। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বজুড়ে এআই কীভাবে সৃজনশীলতাকে—সিনেমা, ছবি, বই তৈরি—বদলে দেবে, তা সত্যিই উন্মুক্ত একটি বিষয়।’

তিনি জানান, বৈজ্ঞানিক সক্ষমতার কারণে এআই-এর মৌলিক মডেলগুলো সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র ও চীন থেকেই আসতে থাকবে। তবে ব্যাপক অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা হবে কারণ ‘প্রচুর ফ্রি ওপেন সোর্স সক্ষমতা থাকবে’ এবং তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে বাণিজ্যিক টুলগুলো সহজলভ্য থাকবে।

নিম্ন আয়ের অঞ্চলগুলোতে, বিশেষ করে আফ্রিকায় জনসেবায় বিপ্লব ঘটানোর ক্ষেত্রে এআই-এর সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন গেটস। তিনি বলেন, ‘এআই-এর অন্যতম বড় সুবিধা হলো, যার কাছে একটি মোবাইল ফোন আছে, তিনি একটি নম্বরে ডায়াল করে বা অ্যাপের মাধ্যমে একজন ভার্চুয়াল ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন, যা এআই দ্বারা পরিচালিত।’

তিনি উল্লেখ করেন, এই সিস্টেম ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ‘সব তথ্য মনে রাখবে’, দিনরাত পরামর্শ দেবে এবং এটি ব্যবহারকারীদের জন্য বিনামূল্যে হবে। গেটস জানান, একই মডেল কৃষকদের মাটির গুণাগুণ, আবহাওয়া, বীজ এবং গবাদিপশু সম্পর্কে এআই-এর মাধ্যমে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করতে পারে। তিনি যুক্তি দেন, কৃষকদের নতুন সরঞ্জাম ও উন্নত জেনেটিক্স দিয়ে ক্ষমতায়ন করা হলে কৃষি আফ্রিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান ইঞ্জিন হতে পারে।

গেটস ফাউন্ডেশনের লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, ২০০০ সালে শিশুদের সম্ভাবনা বিকাশে সহায়তা করতে এবং অবহেলিত রোগ মোকাবিলায় তার সংস্থাটি তৈরি হয়েছিল। ম্যালেরিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ বছর প্রায় ৬ লাখ শিশু এতে মারা গেছে।’ তিনি মন্তব্য করেন, ‘এত ধনী একটি বিশ্ব যে এটি নির্মূল করার সম্পদ খুঁজে পায় না, তা সত্যিই পাগলামি।’ তিনি বলেন, ‘এমন কোনো কারণ নেই যে আমরা ম্যালেরিয়া দূর করতে পারব না, যাতে কোনো শিশু আর এতে কষ্ট না পায়।’

অপুষ্টিকেও শিশু বিকাশের অন্যতম বড় এবং কম বোধগম্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। গেটস বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো এআই-এর সুষম অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, ‘এআই যেন সহজলভ্য হয়, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের তরুণদের কাছে—এটি নিশ্চিত করা আমাদের ফাউন্ডেশনের একটি লক্ষ্য।’