সিরীয় প্রেসিডেন্ট: ভূতের সঙ্গে যুদ্ধ করছে ইসরায়েল

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা অভিযোগ করেছেন, গাজায় চালানো ‘ভয়াবহ গণহত্যা’ থেকে বিশ্বের দৃষ্টি সরাতেই ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে এই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি করছে। শনিবার দোহা ফোরামে সিএনএনের ক্রিশ্চিয়ান আমানপুরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।

আল-শারা বলেন, ‘ইসরায়েল নিজেদের নিরাপত্তার অজুহাতে সীমান্তের বাইরে সামরিক অভিযান বাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা ৭ অক্টোবরের ঘটনাকে অজুহাত বানিয়ে চারদিকে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। তারা যেন ভূতের সঙ্গে যুদ্ধ করছে।’

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে ইসরায়েল সিরিয়ায় শত শত বিমান হামলা চালিয়েছে, যাতে বহু মানুষ নিহত হয়েছেন। গত মাসে দামেস্কের কাছে বেইত জিন শহরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হন। ইসরায়েল দক্ষিণ সিরিয়ায় স্থল অভিযানও পরিচালনা করেছে এবং সিরিয়ার অভ্যন্তরে একাধিক তল্লাশিচৌকি বসিয়ে বহু সিরীয় নাগরিককে আটক করে নিয়ে গেছে।

প্রেসিডেন্ট শারা জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইসরায়েলের প্রতি শান্তি ও স্থিতিশীলতার ইতিবাচক বার্তা পাঠিয়েছি। আমরা স্পষ্ট বলেছি, সিরিয়া শান্তির দেশ হতে চায়; কোনো ধরনের সংঘাত রপ্তানি আমাদের লক্ষ্য নয়, এমনকি ইসরায়েলের বিরুদ্ধেও নয়। কিন্তু এর জবাবে ইসরায়েল আমাদের দিয়েছে চরম সহিংসতা এবং আকাশসীমার ব্যাপক লঙ্ঘন।’

১৯৭৪ সালের বিচ্ছিন্নতা চুক্তি পুনর্বহালের আহ্বান জানিয়ে শারা বলেন, ‘এই চুক্তি ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে টিকে আছে। এটিকে বদলে নতুন কোনো অসামরিকীকৃত অঞ্চল করার চেষ্টা পুরো অঞ্চলকে গভীর বিপদের দিকে ঠেলে দেবে।’

মঙ্গলবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক বক্তব্যের জবাবে তিনি একথা বলেন। নেতানিয়াহু দাবি করেছিলেন, ‘দামেস্ক থেকে গোলানের জাবাল আল-শেখ পর্যন্ত একটি অসামরিকীকৃত বাফার জোন তৈরি করলে সিরিয়ার সঙ্গে চুক্তি সম্ভব।’ এর জবাবে শারা প্রশ্ন তোলেন, ‘ইসরায়েল বলে তারা দক্ষিণ সিরিয়া থেকে আক্রমণের আশঙ্কা করছে। তাহলে সেই বাফার জোন রক্ষা করবে কে? যদি সিরীয় সেনা না থাকে, তবে কি ইসরায়েল নিজেই থাকবে?’

এ প্রসঙ্গে আল-শারা বলেন, ‘সিরিয়াই আক্রান্ত হচ্ছে, ইসরায়েল নয়। তাই বাফার জোন বা ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের অধিকারের প্রশ্নে সবার আগে দাবি সিরিয়ারই।’

দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে প্রেসিডেন্ট শারা বলেন, ‘সিরিয়া এখন তার সেরা দিনগুলো পার করছে। আমরা একটি সচেতন জাতি গঠন করছি।’ তবে তিনি স্বীকার করেন, পূর্ণ ঐক্য প্রতিষ্ঠা এখনও সম্ভব হয়নি এবং এ পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আসাদ সরকারের রেখে যাওয়া বিভাজনের কারণে সিরীয়রা একে অপরকে ভালোভাবে চিনত না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য আমরা বহু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে ক্ষমা করে দিয়েছি।’

আসাদ-বিরোধী আন্দোলনকে ‘সুন্নি বিপ্লব’ হিসেবে আখ্যায়িত করার ধারণাও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, ‘সিরিয়ার সব সম্প্রদায়ই এই বিপ্লবে অংশ নিয়েছে। আলাউইরাও আসাদ শাসনের শিকার হয়েছে। অনেকে ভয়ে চুপ ছিলেন, কিন্তু সবাই শাসকের পক্ষে ছিলেন না।’

সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ার উপকূলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় শত শত আলাউই নাগরিক নিহত এবং সুয়াইদায় সরকারি বাহিনী ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর সংঘাতে বহু সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আল-শারা বলেন, ‘এসব আমরা মেনে নিতে পারি না। সিরিয়া এখন একটি আইনের দেশ এবং আইনের মাধ্যমেই সবার অধিকার রক্ষা করা হবে।’