ইউরোপের শিল্পের হৃদপিণ্ডে আঘাত করছে চীন, সতর্ক করলেন ম্যাক্রোঁ

চীনের শিল্পখাতের উত্থান ইউরোপের অর্থনীতির ভিত্তির জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে সতর্ক করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, বেইজিং যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর উদ্যোগ না নেয়, তবে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।

চীন সফরের পর দৈনিক লেস ইকোসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাক্রোঁ বলেন, ইউরোপের বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা এখন অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত বছর বেইজিংয়ের সঙ্গে এই ঘাটতি ৩০ হাজার কোটি ইউরো (৩৪ হাজার ৯৫০ কোটি ডলার) ছাড়িয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘আমি চীনাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে তাদের এই বাণিজ্য উদ্বৃত্ত টেকসই নয়। কারণ তারা আমাদের কাছ থেকে প্রায় কিছুই আমদানি না করে মূলত তাদের নিজেদের ক্রেতাদেরই ধ্বংস করছে।’

ফরাসি প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি চীনা নেতাদের স্পষ্ট করে বলেছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ইইউ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।

ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি, যদি তারা কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখায়, তবে আমরা ইউরোপীয়রা আগামী মাসগুলোতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে এবং সহযোগিতা কমাতে বাধ্য হব। যেমনটা যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের মাধ্যমে করেছে।’ তিনি উল্লেখ করেন যে, বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের সঙ্গেও তার কথা হয়েছে।

ইউরোপের শিল্পের মেরুদণ্ড ঝুঁকির মুখে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চীন ইউরোপীয় শিল্প ও উদ্ভাবন মডেলের হৃদপিণ্ডে আঘাত করছে, যা ঐতিহাসিকভাবে মেশিন টুলস ও অটোমোবাইলের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল।’

তিনি আরও বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুরক্ষাবাদী নীতির ফলে চাপ আরও বাড়ছে। কারণ এর ফলে চীনা রপ্তানি এখন ইউরোপের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

ফলে ‘আজ আমরা দুয়ের মাঝখানে আটকা পড়েছি এবং এটি ইউরোপীয় শিল্পের জন্য জীবন-মরণের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা সমন্বয়ের বাজারে পরিণত হয়েছি এবং এটি সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি,’ বলেন ম্যাক্রোঁ।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেন যে, একটি ঐক্যবদ্ধ ইউরোপীয় অবস্থান তৈরি করা এখনও কঠিন। তিনি বলেন, জার্মানি ক্রমবর্ধমান ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি স্বীকার করলেও ‘এখনও আমাদের অবস্থানের সঙ্গে পুরোপুরি একমত নয়।’

তার মতে, ইউরোপকে নিয়মকানুন সহজ করা, একক বাজার গভীর করা, উদ্ভাবনে বিনিয়োগ, সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার এবং মুদ্রানীতি সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে চীনের উচিত অভ্যন্তরীণ ভোগ বাড়ানো এবং নিজেদের বাজারের বাধাগুলো কমিয়ে আনা।

বিদেশি বিনিয়োগের ধরনে পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে চীনা কোম্পানিগুলোকে ইউরোপে সম্প্রসারণের পরামর্শ দেন ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় শুধু আমদানি করতে পারি না। চীনা কোম্পানিগুলোকে ইউরোপের মাটিতে আসতে হবে... এবং ইউরোপের জন্য মূল্য ও সুযোগ তৈরি করতে হবে।’ তবে তিনি সতর্ক করে দেন যে, তাদের এই বিনিয়োগ ‘শিকারি’ বা আগ্রাসী হওয়া যাবে না।

সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ সরঞ্জামের ওপর ইউরোপের সীমা এবং রেয়ার আর্থ বা বিরল খনিজ উপাদানের ওপর চীনের বিধিনিষেধসহ উভয় পক্ষের আক্রমণাত্মক রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রস্তাবও দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইউরোপকে তার অভ্যন্তরীণ বাজারের শক্তি চিনতে হবে এবং প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানকে সমর্থন করার জন্য মুদ্রানীতি সমন্বয় করতে হবে। ম্যাক্রোঁর মতে, ইউরোপকে অবশ্যই ‘মুদ্রার স্থিতিশীলতা এবং বিশ্বাসযোগ্য বিনিয়োগের একটি অঞ্চল’ হিসেবে টিকে থাকতে হবে।