ইসরায়েলি সেনাপ্রধান: গাজার ‘হলুদ রেখা’ই নতুন সীমান্ত, সেনা সরবে না

যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত বা প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারে অনীহা প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রধান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, বর্তমানে নির্ধারিত ‘হলুদ রেখা’ বা ইয়েলো লাইন থেকে তাদের সেনারা আর পিছু হটবে না। বরং এই রেখাটিকেই ইসরায়েল ও গাজার মধ্যকার ‘নতুন সীমান্ত’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন তিনি।

সম্প্রতি উত্তর গাজায় মোতায়েন করা ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এমন মন্তব্য করেন সামরিক বাহিনীর প্রধান ইয়াল জামির। সেনাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘হলুদ রেখা হবে আমাদের নতুন সীমান্ত। এটি আমাদের সম্মুখ প্রতিরক্ষা রেখা হিসেবে কাজ করবে। এই রেখা বরাবর আমাদের অভিযান কার্যক্রম চলবে এবং এখান থেকে আমরা আর সরব না।’

সেনাপ্রধানের এই ঘোষণার ফলে গাজার অর্ধেকের বেশি এলাকা ইসরায়েলি বাহিনীর স্থায়ী নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তথাকথিত এই নতুন সীমানার মধ্যে গাজার বিস্তীর্ণ কৃষিজমি এবং মিশরের সঙ্গে সংযোগকারী কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

গত ১০ অক্টোবর শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির সঙ্গে সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য সরাসরি সাংঘর্ষিক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা এবং অক্টোবরে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, গাজা দখল বা ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার কোনো সুযোগ নেই। বরং চুক্তিটিতে ধাপে ধাপে গাজা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

সেনাপ্রধানের এই মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে দেশটির সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনেই সেনা মোতায়েন রেখেছেন। উল্টো হামাসের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলার জেরে উত্তর গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। বর্তমানে ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা উপত্যকাটির উপকূলীয় সংকীর্ণ এলাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরেও সহিংসতা থামেনি; বরং এরপর ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

এদিকে সংঘাতের পাশাপাশি সাংবাদিকদের ওপর হামলার ভয়াবহ তথ্যও উঠে এসেছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি বছরে বিশ্বজুড়ে ৬৭ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৯ জন ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে হত্যা করেছে ইসরায়েল। সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২২০ জন সাংবাদিক ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন।