বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারে পালাবদল: এশীয় মুদ্রার শক্তিশালী হওয়ার ইঙ্গিত

মার্কিন ডলারের সাম্প্রতিক দুর্বলতার সুযোগে এশিয়ার মুদ্রাবাজারে ইতিবাচক পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। বিশেষ করে চীনের ইউয়ান এবং মালয়েশীয় রিঙ্গিতের মতো মুদ্রাগুলোতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বা ‘লং বেট’ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত রয়টার্সের একটি জরিপে এশীয় অর্থনীতির এই চিত্র উঠে এসেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডলারের বিপরীতে এই অঞ্চলের মুদ্রাগুলোর মান আরও শক্তিশালী হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।

মুদ্রাবাজারে ‘লং বেট’ বলতে বোঝায় ভবিষ্যতে দাম বাড়ার প্রত্যাশায় কোনো মুদ্রা আগে থেকেই কিনে রাখা। অন্যদিকে, দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কায় মুদ্রা বিক্রি করে দেওয়া এবং পরে কম দামে পুনরায় কিনে নেওয়ার কৌশলকে ‘শর্ট পজিশন’ বলা হয়। রয়টার্সের জরিপে এশিয়ার নয়টি উদীয়মান অর্থনীতির মুদ্রার ওপর বাজার সংশ্লিষ্টদের অবস্থান যাচাই করা হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ১১ জন বিশ্লেষকের তথ্যে দেখা গেছে, সিঙ্গাপুর ডলারের দাম বাড়ার বিষয়ে তারা বেশ আশাবাদী। পাশাপাশি থাই বাথের ওপরও ‘লং পজিশন’ বৃদ্ধি পেয়েছে।

চলতি বছরে এশীয় মুদ্রাগুলোর মধ্যে মালয়েশীয় রিঙ্গিতের পারফরম্যান্স ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল। ২০১৭ সালের পর এই মুদ্রার মান এখন পর্যন্ত ৮ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। গত জুনের পর থেকে রিঙ্গিতের ওপর ‘লং পজিশন’ এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। কঠোর মুদ্রানীতি এবং উন্নত প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দেশটির মুদ্রাকে শক্তিশালী ভিত্তি দিয়েছে। আর্থিক সংস্থা এমইউএফজি-এর জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক লয়েড চ্যান জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ পরিবেশ এবং আর্থিক সংস্কারের সুফল পাচ্ছে রিঙ্গিত। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবধান কমে আসাও এতে ভূমিকা রাখছে।

চীনের অর্থনীতির দিকে তাকালে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের পর ইউয়ানের ওপর ‘লং পজিশন’ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। টানা চার মাস ধরে ইউয়ানের মান বাড়ছে, যা গত চার বছরের মধ্যে দীর্ঘতম বৃদ্ধির রেকর্ড। বছরের প্রথম ১১ মাসে চীনের রেকর্ড পরিমাণ রফতানি উদ্বৃত্ত এই প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। বেইজিং ২০২৬ সালে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে আরও সক্রিয় নীতি গ্রহণের পরিকল্পনা করছে।

তবে মুদ্রাবাজারের এই চাঙ্গাভাবের উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে ভারতে। ভারতীয় রুপির বিপরীতে ‘শর্ট পজিশন’ গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। টানা অষ্টম বছরের মতো রুপি অবমূল্যায়নের শিকার হচ্ছে এবং এ বছর এর মান ৫ শতাংশেরও বেশি কমেছে। বার্কলেসের বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৯৪ রুপিতে গিয়ে ঠেকতে পারে। তবে ভারতের সঙ্গে উন্নত দেশগুলোর মুদ্রাস্ফীতির পার্থক্য থাকায় দেশটির রিজার্ভ ব্যাংক এখনই বড় কোনো হস্তক্ষেপ করবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ফিলিপাইনের পেসোর অবস্থাও নাজুক। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিসুদ কমানোর ধারা অব্যাহত রাখায় পেসোর বিরুদ্ধে নেতিবাচক বা ‘বেয়ারিশ’ অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক টানা পঞ্চমবারের মতো সুদহার কমাতে পারে। এছাড়া ইন্দোনেশীয় রুপিয়া, দক্ষিণ কোরীয় ওন এবং তাইওয়ান ডলারের বিপরীতে ‘শর্ট পজিশন’ কিছুটা কমেছে। ইন্দোনেশিয়ার উজ্জ্বল প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দেশটির মুদ্রাকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড নীতিসুদ কমাতে পারে, এমন সম্ভাবনাই মূলত ডলার সূচককে দুর্বল করেছে এবং এশীয় মুদ্রাগুলোকে শক্তিশালী হওয়ার রসদ জুগিয়েছে। ফেড বুধবার ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমানোর আগেই জরিপের উত্তরদাতাদের মতামত সংগ্রহ করা হয়েছিল। রয়টার্সের এই জরিপে -৩ থেকে +৩ স্কেলের মাধ্যমে বাজারের অবস্থান পরিমাপ করা হয়, যেখানে +৩ বলতে মার্কিন ডলারের পক্ষে শক্তিশালী অবস্থান বোঝানো হয়েছে।