হাকান ফিদান: গাজায় শান্তি ফেরাতে সেনা পাঠাতেও প্রস্তুত তুরস্ক

ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান এবং গাজায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে তুরস্ক ‘যে কোনো দায়িত্ব’ নিতে প্রস্তুত। বৃহস্পতিবার আল জাজিরা অ্যারাবিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এই মন্তব্য করেন।

তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট (রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান) এর রাজনৈতিক সদিচ্ছার ভিত্তিতে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় যেকোনো দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত তুরস্ক।’ তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, ‘যদি শান্তির জন্য সৈন্য পাঠানোর প্রয়োজন হয়, তবে আমরা তা পাঠাতে প্রস্তুত।’

গাজা শান্তি প্রক্রিয়ায় অর্জিত অগ্রগতি সহজ ছিল না উল্লেখ করে ফিদান এর পেছনে থাকা বিশাল প্রচেষ্টা ও ত্যাগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আসলে এটি কেবল ইসলামি বিশ্ব বা আরব বিশ্বের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবতার জন্যই গভীর শোকের বিষয়। দুই বছর ধরে চোখের সামনে বেসামরিক নাগরিক, নিরপরাধ মানুষ, নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে; ৭০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন; হাজার হাজার মানুষ আহত ও নিখোঁজ হয়েছেন, যা স্বাভাবিকভাবেই মানবতার বিবেকে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে।’

হাকান ফিদান জানান, গাজা শান্তি প্রক্রিয়ায় কিছুটা অগ্রগতি হলেও পরিকল্পিত অনেক পদক্ষেপ এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি এবং ইসরায়েল তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি আগের সংঘাতের চেয়ে কিছুটা কম তীব্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তাব পাস করেছে এবং এখন এর বিধানগুলো বাস্তবে রূপ দেওয়া প্রয়োজন।

এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বড় দায়িত্ব রয়েছে উল্লেখ করে ফিদান বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কাতার, সৌদি আরব, মিশর, জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আঞ্চলিক দেশগুলো একত্রে কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘পিস কাউন্সিল বা শান্তি পরিষদ গঠন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ফিলিস্তিনিদের কাছে শাসনভার হস্তান্তর, হামাস কর্তৃক একটি ফিলিস্তিনি কারিগরি কমিটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং একটি পুলিশ বাহিনী গঠন—এমন অনেক বিষয় রয়েছে।’

তুরস্ক আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীতে যোগ দিতে প্রস্তুত জানিয়ে ফিদান বলেন, ইসরায়েল তুরস্কের অন্তর্ভুক্তি না চাইলেও আঙ্কারার অবস্থান ‘পরিষ্কার’। তিনি বলেন, তেল আবিব একমাত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী নয়। তিনি মন্তব্য করেন, ‘আমেরিকানরা যদি ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে, তবে তা আমাদের জন্য ভালো। আর যদি না পারে, তবে সেটা তাদের বিষয়।’

ইসরায়েলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইসরায়েলকে তার ‘সর্বোচ্চ দাবি’ বা অযৌক্তিক সব দাবি ত্যাগ করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, বাফার জোন তৈরির বিষয়ে ইসরায়েলের দাবিগুলো মূলত আলোচনার একটি কৌশল এবং এটি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর অন্যতম পরিকল্পনা। নেতানিয়াহুর প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করা এবং পশ্চিম তীরের মতো এই ভূখণ্ডটিকেও ইসরায়েলের অতিরিক্ত জমিতে পরিণত করা।

সিরিয়া প্রসঙ্গে ফিদান বলেন, দেশটির মুক্তির প্রথম বছর সিরীয় জনগণ ও অঞ্চলের জন্য আশা বয়ে আনা উচিত। মার্কিন সিজার অ্যাক্টের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুরূপ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সিরিয়ার পাশে থাকতে হবে। তবে সিরিয়ায় ইসরায়েলের সম্প্রসারণবাদের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, এটি গাজায় তাদের কর্মকাণ্ডের মতোই অগ্রহণযোগ্য।

ফিদান আরও অভিযোগ করেন, সিরিয়ায় ইসরায়েলের জোরদার তৎপরতা পিকেকে/ওয়াইপিজি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে প্রভাবিত করছে। ইসরায়েলের কাছ থেকে ‘ভিন্ন সংকেত’ পাওয়ার পর এই গোষ্ঠীটি সিরিয়া সরকারের সঙ্গে ১০ মার্চের চুক্তি বাস্তবায়নে বিলম্ব করছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ থেকে সরে এসেছে।