লাতিন আমেরিকায় ডানপন্থার জোয়ার, এবার চিলিতে কাস্তের বিজয়

চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থী নেতা হোসে আন্তোনিও কাস্ত জয়ী হয়েছেন। অপরাধ ও অবৈধ অভিবাসন নিয়ে জনগণের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগকে পুঁজি করে তিনি এই বিজয় অর্জন করেন। এর মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালে সামরিক শাসনের অবসানের পর দেশটি এক তীব্র ডানপন্থী রাজনৈতিক ধারার দিকে মোড় নিলো।

রোববার অনুষ্ঠিত রান-অফ নির্বাচনে কাস্ত পেয়েছেন ৫৮ দশমিক ৩০ শতাংশ ভোট এবং তার বামপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বী জ্যানেট জারা পেয়েছেন ৪১ দশমিক ৭০ শতাংশ। ৯৫ শতাংশের বেশি ভোট গণনার পর এই ফল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করে জ্যানেট জারা জানান, তিনি হোসে আন্তোনিও কাস্তের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিলির কল্যাণে তার সাফল্য কামনা করেছেন। জারা বলেন, ‘গণতন্ত্র স্পষ্টভাবে তার রায় দিয়েছে।’

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কাস্ত বরাবরই কট্টর ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত। তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ, উচ্চ অপরাধপ্রবণ এলাকায় সেনা মোতায়েন এবং অবৈধ অভিবাসীদের দেশত্যাগে বাধ্য করা। তিনি সরকারি খরচে ব্যাপক কাটছাঁটেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

কাস্তের এই বিজয়কে লাতিন আমেরিকায় ডানপন্থার সাম্প্রতিক উত্থানের একটি প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে ইকুয়েডরের ড্যানিয়েল নোবোয়া, এল সালভাদরের নাইব বুকেলে এবং আর্জেন্টিনার হাভিয়ের মিলেই ক্ষমতায় এসেছেন। গত অক্টোবরে বলিভিয়ায় দীর্ঘদিনের সমাজতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে মধ্যপন্থী রোদ্রিগো পাস নির্বাচিত হন।

এটি ছিল কাস্তের তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতা এবং দ্বিতীয়বারের মতো রান-অফ নির্বাচনে অংশগ্রহণ। ২০২১ সালে তিনি বামপন্থী নেতা গাব্রিয়েল বোরিচের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তবে এবার অপরাধ ও অভিবাসন নিয়ে উদ্বিগ্ন ভোটারদের সমর্থন আদায়ে তিনি সক্ষম হয়েছেন।

রোববার সন্ধ্যায় রাজধানী সান্তিয়াগোয় কাস্তের নির্বাচনী সদরদপ্তরে তার সমর্থকেরা চিলির পতাকা হাতে উল্লাস করেন। তাদের মধ্যে অনেককে লাল টুপি পরতে দেখা যায়, যাতে লেখা ছিল ‘চিলিকে আবার মহান করুন’।

লাতিন আমেরিকার অন্যতম নিরাপদ দেশ চিলিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সহিংস অপরাধের মাত্রা বেড়েছে। সংগঠিত অপরাধী চক্রগুলো পেরু ও বলিভিয়ার সীমান্তবর্তী মরু অঞ্চল, প্রধান সমুদ্রবন্দর এবং অভিবাসন সংকটকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আসা অবৈধ অভিবাসীদের অধিকাংশই ভেনিজুয়েলার নাগরিক। কাস্তের প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আইসিই-এর মতো একটি বিশেষ পুলিশ বাহিনী গঠন করে অবৈধ অভিবাসীদের দ্রুত আটক ও বহিষ্কারের বিষয়টিও রয়েছে।

তবে কাস্তের কিছু চরমপন্থী প্রস্তাব বিভক্ত কংগ্রেসে বাধার সম্মুখীন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে ডানপন্থীরা উভয় কক্ষেই আসন বাড়ালেও তাদের বেশিরভাগই ঐতিহ্যবাহী দলগুলোর সদস্য। সিনেটে বাম ও ডানপন্থীদের আসন সংখ্যা সমান এবং নিম্নকক্ষে জনতাবাদী পিপলস পার্টির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

এদিকে, বিশ্বের বৃহত্তম তামা ও অন্যতম প্রধান লিথিয়াম উৎপাদক দেশ চিলিতে কাস্তের বিজয়ের পর বাজার-বান্ধব নীতির প্রত্যাশায় স্থানীয় শেয়ারবাজার, মুদ্রা পেসোর মান এবং ইকুইটি সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।