মস্কোর বিলাসী নির্বাসনে আসাদ পরিবার, পুরোনো পেশায় ফিরছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট!

সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও তার পরিবার বর্তমানে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে জীবন যাপন করছেন। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন অনুসারে, বিলাসবহুল পরিবেশে থাকলেও তারা রাজনৈতিক ও জনজীবন থেকে প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। জানা গেছে, লন্ডনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই চক্ষু চিকিৎসক তার পুরোনো পেশায় ফেরার প্রস্তুতি হিসেবে বর্তমানে রুশ ভাষা শিখছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর ভোরে বিদ্রোহী বাহিনী দামেস্কের দিকে অগ্রসর হলে রুশ সেনাদের সহায়তায় বাশার আল-আসাদ সিরিয়া ত্যাগ করেন। তাকে প্রথমে উপকূলীয় খমেইমিম বিমানঘাঁটিতে এবং পরে সেখান থেকে বিমানে করে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।

বর্তমানে আল-আসাদ পরিবার মস্কোর পশ্চিমে অবস্থিত অভিজাত রুবলিওভকা এলাকায় বসবাস করছে, যা রাশিয়ার প্রভাবশালী রাজনীতিক ও ধনকুবেরদের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। তবে আর্থিক সচ্ছলতা সত্ত্বেও পরিবারটি রুশ কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির মধ্যে রয়েছে এবং বাইরের বিশ্বের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ অত্যন্ত সীমিত।

২০১১ সালে সিরিয়ায় সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে সহিংস অভিযানের কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে আসাদ পরিবারের বিপুল সম্পদ রাশিয়ায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। ক্রেমলিনের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার নেতৃত্বের কাছে আসাদ এখন আর রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নন। এ বিষয়ে ইরাকে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত এলব্রুস কুত্রাশেভ এক সাক্ষাৎকারে জানান, বাশার আল-আসাদ রাশিয়ায় নিরাপদে আছেন, তবে তাকে কোনো রাজনৈতিক বা গণমাধ্যমসংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে অংশ নিতে দেওয়া হবে না।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, সিরিয়া ছাড়ার আগে ঘনিষ্ঠ মিত্র বা স্বজনদের কিছু না জানানোয় আসাদের পরিবারের মধ্যেই অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। মস্কোতে আসার পর অবশ্য লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত স্ত্রী আসমা আল-আসাদের চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে পরিবারটি আবার একত্রিত হয়। পরীক্ষামূলক চিকিৎসার পর তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

আল-আসাদের সন্তানেরা এরই মধ্যে মস্কোর জীবনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। তার মেয়ে জেইন আল-আসাদ চলতি বছরের জুনে মস্কোর অভিজাত এমজিআইএমও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। অন্যদিকে, একসময়ের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত ছেলে হাফেজ আল-আসাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সব মিলিয়ে, একসময়ের ক্ষমতাধর এই সিরীয় প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবার এখন মস্কোর বিলাসী আবরণে রাজনৈতিকভাবে নিঃসঙ্গ ও নীরব জীবন পার করছেন।