গাজায় খাদ্য সংকটে ১৬ লাখ মানুষ, পরিস্থিতি নাজুক বললেন জাতিসংঘ মহাসচিব

গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ এড়ানো সম্ভব হলেও সেখানকার মানবিক পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত নাজুক এবং সংঘাতপূর্ণ বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গাজার ৭৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ এখনো চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং অপুষ্টির গুরুতর ঝুঁকিতে রয়েছে।

শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস বলেন, ‘দুর্ভিক্ষ কিছুটা পিছিয়ে দেওয়া গেছে। আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ এখন বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার পাচ্ছেন। তবে এই অর্জন অত্যন্ত নাজুক এবং বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, গাজার ১৬ লাখ মানুষ বা মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশেরও বেশি চরম মাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়েছে। গাজার অর্ধেকেরও বেশি এলাকায় ইসরায়েলি সেনা মোতায়েন থাকায় কৃষি জমি এবং পুরো জনবসতি সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। হামলা ও শত্রুতা অব্যাহত থাকায় বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি বাড়ছে এবং জাতিসংঘের কর্মীরাও চরম ঝুঁকির মুখে পড়ছেন।

একটি ‘টেকসই যুদ্ধবিরতি’র আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের আরও সীমান্ত ক্রসিং প্রয়োজন। পাশাপাশি অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা, গাজার ভেতরে নিরাপদ রুট নিশ্চিত করা, টেকসই অর্থায়ন এবং এনজিওগুলোর জন্য নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার প্রয়োজন।’

ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) শুক্রবার তাদের নতুন পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, শত্রুতা হ্রাস এবং মানবিক ও বাণিজ্যিক খাদ্য সরবরাহ বৃদ্ধির ফলে সাময়িকভাবে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি মোকাবেলা করা গেছে। তবে সর্বশেষ প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে, গাজার সার্বিক পরিস্থিতি এখনো আশঙ্কাজনক।

জিম্মিদের দেহাবশেষ ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে যেতে ইসরায়েলের অনাগ্রহ প্রসঙ্গেও কথা বলেন জাতিসংঘ প্রধান। তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপে যাওয়া অপরিহার্য এবং আমি মনে করি না এটি এড়ানোর জন্য কোনো অজুহাত দেখানো উচিত।’ তিনি শান্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া এবং বিশেষ করে যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।

অধিকৃত পশ্চিম তীরের পরিস্থিতি সম্পর্কে গুতেরেস সতর্ক করে বলেন, ‘দ্রুত অবনতিশীল পরিস্থিতির ওপর থেকে আমরা দৃষ্টি সরাতে পারি না।’ তিনি জানান, সেখানে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা, জমি দখল, উচ্ছেদ এবং চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে ফিলিস্তিনিরা চরম সংকটে পড়েছে। উত্তর পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের পর হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশিত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাগুলো বাধ্যতামূলক এবং তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের সেবায় সংস্থাটির ভূমিকাকে ‘অপরিহার্য’ হিসেবে অভিহিত করেন। ফিলিস্তিনে এই সংকটকে ‘মানুষের সিদ্ধান্তের ফল’ হিসেবে উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের জন্য আশার আলো প্রয়োজন। যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে হবে। সহিংসতার এই অন্তহীন চক্র অবশ্যই ভাঙতে হবে।’