স্লোভাক প্রেসিডেন্ট: ইইউ পশ্চিম বলকানের বিশ্বাস নিয়ে জুয়া খেলছে

স্লোভাকিয়ার প্রেসিডেন্ট পিটার পেলেগ্রিনি ইউক্রেন যুদ্ধ আলোচনায় সমাধানের পক্ষে মত দিয়েছেন এবং বলকান অঞ্চলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে কঠোর সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন। রোববার বেলগ্রেডে সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুসিকের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পশ্চিম বলকানের দেশগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্টের ঝুঁকি তৈরি করছে।

প্রেসিডেন্ট পেলেগ্রিনি ইউক্রেন সংঘাত নিরসনে আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং এই প্রক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানান। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আশা করি ২০২৬ সাল একটি শান্তির বছর হতে পারে।’

ইইউর সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কড়া সমালোচনা করে স্লোভাক প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন পশ্চিম বলকানের নাগরিকদের বিশ্বাস নিয়ে জুয়া খেলছে।’ সার্বিয়ার জন্য ইইউ আলোচনার নতুন ধাপ উন্মুক্ত করতে দেরি করাকে তিনি কিছু সদস্য রাষ্ট্রের ‘রাজনৈতিক খেলা’ হিসেবে অভিহিত করেন।

স্লোভাকিয়া সার্বিয়ার ইইউ অন্তর্ভুক্তি আলোচনায় অতিরিক্ত রাজনৈতিক শর্ত আরোপের বিরোধী। পেলেগ্রিনি জোর দিয়ে বলেন, নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণ করলে ইইউ সদস্যপদ পাওয়া বেলগ্রেডের অধিকার। রাজনৈতিক বিবেচনার বদলে মেধার ভিত্তিতে অগ্রগতির মূল্যায়ন হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

দীর্ঘ বিলম্বের ফলে এই অঞ্চলের মানুষ ইউরোপীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে আসতে পারে বলে সতর্ক করেন স্লোভাক প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, এমনটা হলে দীর্ঘমেয়াদে ইইউর নিরাপত্তা ও বিশ্বাসযোগ্যতা দুর্বল হয়ে পড়বে।

ইউক্রেন প্রসঙ্গে স্লোভাকিয়ার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এই যুদ্ধের সমাধান আলোচনার টেবিলেই হওয়া উচিত। তিনি শান্তি উদ্যোগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পৃক্ততার প্রশংসা করেন এবং সংঘাত বন্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেন।

সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুসিক জানান, দুই দেশ সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং জ্বালানি খাতে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, সার্বিয়া পারমাণবিক শক্তিতে স্লোভাকিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে চায় এবং ভবিষ্যতের উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে চলমান সংঘাত নিরসনে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় এখন কূটনৈতিক আলোচনার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। কিয়েভ তার আঞ্চলিক অখণ্ডতা পুনরুদ্ধারের দাবিতে অটল থাকলেও যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি পরিণতির কথা ভেবে আলোচনার আহ্বান ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।

পশ্চিম বলকানের দেশগুলো বর্তমানে ইইউভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। আলবেনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, কসোভো, মন্টিনিগ্রো, উত্তর মেসিডোনিয়া এবং সার্বিয়া দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ইউরোপীয় একত্রীকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত।

মন্টিনিগ্রো ও সার্বিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে উত্তর মেসিডোনিয়া ও আলবেনিয়া ২০২২ সালে আলোচনা শুরু করলেও দৃশ্যমান অগ্রগতির অপেক্ষায় আছে। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা একই বছর প্রার্থী মর্যাদা পেলেও এখনো আলোচনা শুরু করেনি এবং কসোভো এই অঞ্চলের একমাত্র দেশ হিসেবে এখনো প্রার্থী মর্যাদা পায়নি।

ইইউ কর্মকর্তারা বারবার বলে আসছেন যে পশ্চিম বলকানের ভবিষ্যৎ এই জোটের মধ্যেই নিহিত। তবে অভ্যন্তরীণ মতভেদ এবং সংস্কারের ধীরগতি সম্প্রসারণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। প্রেসিডেন্ট পেলেগ্রিনির এই সফরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং ইইউ কাঠামোর মধ্যে সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।