১ জানুয়ারি থেকে পাল্টে যাচ্ছে বিশ্ববাণিজ্যের নিয়ম

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র ও চীনসহ বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোতে কার্বন মূল্য নির্ধারণ, ভোক্তা নিরাপত্তা, কর ব্যবস্থা এবং ভ্রমণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। বৃহস্পতিবার (১ জানুয়ারি) থেকে এসব নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার ফলে বিশ্ববাণিজ্য ও নীতিমালার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইইউ কর্তৃপক্ষ কার্বন-নিবিড় শিল্প যেমন লোহা, ইস্পাত, সিমেন্ট, অ্যালুমিনিয়াম, সার ও হাইড্রোজেনের মতো পণ্যের আমদানির ওপর ‘বর্ডার কার্বন ট্যাক্স’ বা সীমান্ত কার্বন কর কার্যকর করবে। এছাড়া শিশুদের খেলনার নিরাপত্তায় নতুন প্রবিধান গ্রহণ করেছে জোটটি। এর আওতায় খেলনায় শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে এমন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ও এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের খেলনায় অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী সুগন্ধিও নিষিদ্ধ থাকবে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ২০৩০ সালের ১ আগস্টের মধ্যে সব খেলনায় ডিজিটাল পাসপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যাতে পণ্যের উৎস সহজেই শনাক্ত করা যায়।

ইইউর সদস্য দেশ বুলগেরিয়া ১ জানুয়ারি থেকে তাদের মুদ্রা হিসেবে ইউরো গ্রহণ করবে। এর ফলে ক্রোয়েশিয়ার পর ইউরোজোনের সদস্য সংখ্যা বেড়ে ২১-এ দাঁড়াবে। অন্যদিকে, ইইউর ট্রেডিং পার্টনারদের মধ্যে ‘প্যান-ইউরোপিয়ান-মেডিটারেনিয়ান’ (পিইএম) রুলস অব অরিজিন বা পণ্যের উৎস সংক্রান্ত সংশোধিত নিয়ম কার্যকর হবে।

যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসসহ বেশ কয়েকটি দেশে ১ জানুয়ারি থেকে ক্রিপ্টো ব্যবহারকারীদের লেনদেনের তথ্য কর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শেয়ার করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) কাঠামো অনুযায়ী, কর ফাঁকি রোধ ও স্বচ্ছতা বাড়াতে ক্রিপ্টো সেবা প্রদানকারীরা ব্যবহারকারীর পরিচয় ও লেনদেনের তথ্য রিপোর্ট করবে।

জুলাই মাসে পাস হওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’-এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে কর ব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে। স্টেট অ্যান্ড লোকাল ট্যাক্স (এসএএলটি) বা স্থানীয় করের ক্ষেত্রে আয়ের ওপর ভিত্তি করে নতুন ব্যবস্থা চালু হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তরের ওপর নতুন কর আরোপ করা হয়েছে। নগদ অর্থ, মানি অর্ডার বা চেকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থের ওপর প্রেরককে ১ শতাংশ কর দিতে হবে। তবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড বা ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে পাঠানো অর্থে এই কর প্রযোজ্য হবে না।

মার্কিন ফেডারেল সরকার বড় কোম্পানিগুলোর কর ফাঁকি রোধে ‘বেস ইরোশন অ্যান্ড অ্যান্টি-অ্যাবিউজ ট্যাক্স’ (বিইএটি) হার স্থায়ীভাবে ১০.৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। পাশাপাশি কাঠের আসবাবপত্রের শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ এবং রান্নাঘর ও বাথরুমের ক্যাবিনেটের শুল্ক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া বাড়িতে শক্তি সাশ্রয়ী সরঞ্জাম, যেমন হিট পাম্প বা ইনসুলেশনের জন্য কর ছাড়ের সুবিধা বাতিল করা হবে।

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতা বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বুরকিনা ফাসো, মালি, নাইজার, দক্ষিণ সুদান ও সিরিয়ার ওপর পূর্ণাঙ্গ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। এর সঙ্গে লাওস ও সিয়েরা লিওনকেও যুক্ত করা হয়েছে। বিশেষত, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা ভ্রমণ নথিপত্রধারীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কিউবা, নাইজেরিয়া ও জিম্বাবুয়েসহ আরও কয়েকটি দেশের নাগরিকদের ভ্রমণে আংশিক কড়াকড়ি আরোপ করা হবে।

চীনেও নীতিমালার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসছে। দেশটির সাইবার নিরাপত্তা আইনের সংশোধনী এবং সীমান্ত পেরিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য স্থানান্তরের নতুন নিয়ম ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এর ফলে সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য দেশের বাইরে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে কঠোর নিরাপত্তা সনদ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া চীনের নতুন ভ্যাট আইন ২০২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর গৃহীত হলেও তা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পুরোপুরি কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।