কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হলো নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অনুষ্ঠিত উন্মুক্ত বিতর্ক শেষ হয়েছে কোনো ধরণের সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব ছাড়াই। বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রে চলমান নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে উন্মুক্ত বিতর্ক শুরু হয়।

নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত বিতর্কে অংশ নেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। বিতর্কে মিয়ানমারের মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চলমান অত্যাচার নির্যাতনের প্রকৃত ঘটনা জানতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের তদন্ত দল পাঠানোর দাবি জানায় বাংলাদেশ। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বিরোধিতা করেছে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী দুই সদস্য রাষ্ট্র দেশ চীন ও রাশিয়া।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য প্রভাবশালী এই দুই দেশ সাম্প্রতিক সহিংসতার পেছনে রোহিঙ্গা 'সন্ত্রাসী'দের দায়ী করেন। তবে নিরাপত্তাপরিষদে প্রভাবশালী অন্য রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশিরভাগ সদস্য দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নির্যাতন বন্ধে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।

উন্মুক্ত বিতর্কের শুরুতে জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান রোহিঙ্গা নির্যাতন ও সংকটের সর্বশেষ চিত্র তুলে ধরেন। মিয়ানমার সরকারেরর প্রতি অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন বন্ধের দাবি জানান তিনি। বিতর্কে অংশ নেয়া মিয়ানমার অবশ্য রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধনের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশও নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে। রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের, অত্যাচার নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র সদস্য দেশগুলোর নিকট বর্ণনা করা হয়।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরেছে। সুপারিশগুলো হলো: মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধ ও মানবিক সহায়তা, মিয়ানমার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একসঙ্গে রাখাইন কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন করা, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ১৯৯২ সালের মিয়ানমার-বাংলাদেশ চুক্তি বাস্তবায়ন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের তাদের অধিবকার ফিরিয়ে দেয়া, রাখাইনে স্থিতিশীলতা ও সুরক্ষা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা।

চলতি বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারায় বেশ কয়েকজন সীমান্তরক্ষী বাহিনী। সেই হামলার পর রাখাইনে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। অভিযানের নামে তখন থেকেই শুরু হয় রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিধনযজ্ঞ।পুড়িয়ে দেয়া হয় রোহিঙ্গাদের গ্রাম। নারীরা হন ধর্ষণের শিকার। জীবন্ত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া বা শিরচ্ছেদ করার ঘটনা ঘটে। সহিংসতা থেকে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর এই নির্যাতনের ঘটনাকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ইতোমধ্যে পাঠ্যপুস্তকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন যোগ্য 'জাতিগত নিধন' বলে আখ্যায়িত করেছে। ইতিহাসের ঘৃণ্য এই অভিযানে ৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নিহতের খবর এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে। অন্যদিকে মিয়ানমার সরকার নিহতের সংখ্যা বলছে মাত্র চারশত।