ইরানের ব্যাপারে কি অবস্থান বদলাচ্ছে আমেরিকা?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতার প্রসঙ্গে অবমাননাকর ও উষ্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার পর এবার হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা ওই চুক্তি মেনে নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ও জাতিসংঘে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি জানিয়েছেন, আমেরিকা পরমাণু চুক্তির বিষয়ে অটল অবস্থানে রয়েছে।

টেলিভিশন চ্যানেলে পাঠানো দুটো ভিন্ন ভিন্ন চিঠিতে মার্কিন এই দুই কর্মকর্তা পরমাণু সমঝোতা প্রত্যয়ন না করার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যকে অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে অভিহিত করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসন বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্টের ওই বক্তব্যের অর্থ পরমাণু সমঝোতা প্রত্যাখ্যান করা নয়।’

এদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালিও তার কট্টর ইরান বিরোধী মানসিকতা থেকে সরে এসে জানিয়েছেন, আমেরিকা পরমাণু সমঝোতার বিষয়ে স্থির অবস্থানে রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত শুক্রবার পরমাণু সমঝোতার বিরুদ্ধে যে বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করেছেন তার বিপরীতে এই দুই কর্মকর্তার বক্তব্যে দেশটির পক্ষ থেকে ইতিবাচকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গত দুইদিন মার্কিন কর্মকর্তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী ও মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির ভূমিকার বিরোধিতা করে নানা ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে ইরানের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এই কর্মকর্তাদের বক্তব্যে এখন নরম সুর লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায়, ওয়াশিংটন পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে আসার হুমকি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।

ইরানের স্বাক্ষরিত এই পরমাণু সমঝোতায় একমাত্র আমেরিকা ছাড়া অন্য সব দেশ চুক্তিটি টিকিয়ে রাখতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়েছে। ইরানকে সমর্থন করা এই দেশগুলোও চায় না আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা বাতিল করে দিক। এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি বলেছেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাতে নানা বিষয়ের ক্ষমতা থাকলেও এককভাবে পরমাণু সমঝোতা বাতিলের কোন এখতিয়ার নেই। আমেরিকার অভ্যন্তরেই ট্রাম্পের ইরান বিরোধী বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’

শুধু মার্কিন এই দুই কর্মকর্তাদের বক্তব্যই নয়, সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারাও এই চুক্তিকে সমর্থন দেয়ার কথা ট্রাম্প প্রশাসনকে জানিয়েছেন। তারা দেশটিকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গেলে কোণঠাসা হয়ে পড়বে যা জাতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর রূপ ধারণ করবে।’

বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, এমনকি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারাও চান না তদের সরকার পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে আসুক। এধরণেরই বিভিন্ন মহল থেকে নানামুখী চাপের মুখোমুখি হয়ে অবশেষে হোয়াইট হাউস পরমাণু সমঝোতায় অটল থাকার বিষয়ে জানিয়েছে।