পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে আবার সেই আম্পায়ার

আবার পাকিস্তানের মাটিতে খেলতে নামছে শ্রীলঙ্কা। ২০০৯ সালে লাহোরে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হওয়ার পর গত আট বছরে জিম্বাবুয়ে ছাড়া আর কোনো টেস্টখেলুড়ে দল পাকিস্তান যায়নি। এতো বছর শ্রীলঙ্কাই প্রথম বড় দল হিসেবে পা রেখেছে পাকিস্তানের মাটিতে। তাও সেই লাহোরই। উদ্দেশ্য তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয়টি খেলা। এই ম্যাচে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করবেন সেই আম্পায়ার— ২০০৯ সালের হামলায় যার শরীরে বিঁধেছিলো সন্ত্রাসীদের গুলি।

৪২ বছর বয়সী আম্পায়ারের নাম আহসান রেজা। ঘটনার দিন শরীরে গুলি নিয়ে অটোতে করে হাসপাতালে যান তিনি। ধারণা করা হচ্ছিলো তিনি শেষ পর্যন্ত হয়তো বাঁচবেন না। কিন্তু প্রাণে বেঁচে যান আহসান রেজা। থেকে যান ক্রিকেটের সঙ্গেও। অবিশ্বাস্য সাহসের পরিচয় দিয়ে আবার তিনি আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্বেও ফিরেছেন।

২০০৯ সালের সেই টেস্টে আহসান রেজা ছিলেন চতুর্থ রিজার্ভ আম্পায়ার। তবে এবার তিনি নামছেন মাঠে। বিষয়টি নিয়ে উইজডেন পাকিস্তানকে এই আম্পায়ার বলেন, ‘এটা আমার জন্য বিশাল সম্মানের ব্যাপার। আল্লাহ আমাকে সেদিন বাঁচিয়ে দিয়েছেন। আর এবার মাঠে আম্পায়ারিং করার সুযগো পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।’

আট বছর আগে যারা সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছিলো, সেই শ্রীলঙ্কা দলই পাকিস্তান এসে খেলছে, বিষয়টি নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন রেজা। তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা সব ভয় ও সংশয় দূরে ঠেলে পাকিস্তানে খেলতে আসছে। এটা বিশাল ব্যাপার। আমি মনে করি পাকিস্তানে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরানোর পথে তাদের এই সিদ্ধান্ত খুব কাজে দিবে।’

২০০৯ সালের সেই ঘটনার দিন সন্ত্রাসীরা প্রথমে ক্রিকেটারদের বাসে হামলা করে। সেখানে পেরে না উঠায় ম্যাচ অফিসিয়ালদের গাড়িতে হামলা করে তারা। এ পর্যায়ে বিদেশি ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রডকে লক্ষ্য করে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। সঙ্গে সঙ্গে আহসান রেজা ক্রিস ব্রডকে আগলে দাঁড়ান এবং তার গায়ে বুলেট লাগে। বুলেটের আঘাতে মারা যান তাদের গাড়ির চালকও।

ঘটনার পর ২৬ দিন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যায় ছিলেন আহসান। তার ফুসফুস ও লিভার প্রায় নষ্ট হয়ে যেতে বসেছিলো। তাকে বাঁচিয়ে তুলতে লেগেছিলো দুই ডজন ব্যাগ রক্ত। ঘটনার কথা স্মরণ করে আহসান রেজা বলেন, ‘ওই রকম ন্যাক্কারজনক এবং ভয়ঙ্কর একটা ঘটনা কখনো ভোলা যায় না। ওই ঘটনা আমাকে অনেক বদলে দিয়েছে। আল্লাহর প্রতি আমার বিশ্বাস ও ভরসা অনেক গুণ বেড়ে গেছে। ঘটনাটা থেকে আমি শিখেছি যে, জীবন থেকে কখনো পালানো উচিত নয়।’