আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের পদক্ষেপে উদ্বিগ্ন মিয়ানমার

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের মুখোমুখি করার পদক্ষেপে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে দেশটি। শুক্রবার মিয়ানমার সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, এ পদক্ষেপ জাতিসংঘের ভিয়েনা চুক্তির লঙ্ঘন। একই সঙ্গে আইসিসি সনদের প্রস্তাবনার পরিপন্থী। এছাড়া এটি মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন করে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা।

গত ৯ এপ্রিল আইসিসির কাছে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো জাতিগত নিধনযজ্ঞকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বিবেচনা করার আবেদন করা হয়। ওই আবেদনে মিয়ানমারকে অপরাধী সাব্যস্ত করে বিচার শুরুর নির্দেশনা চান সংস্থাটির কৌঁসুলি ফাতাও বেনসুউদা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সনদে মিয়ানমার স্বাক্ষর না করলেও সনদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবৃতি দিয়েছে দেশটির সরকার। এতে দাবি করা হয়, ১৯৬৯ সালের সনদে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোই কেবল এ বিচারের আওতায় আসবে। যেসব দেশ এ চুক্তি অনুমোদন করেনি তাদের ওপর তা চাপিয়ে দেয়া যাবে না। ভিয়েনা চুক্তির বিষয়েও একই ধরনের কথা বলা হয়েছে।

বিবৃতিতে আইসিসির কৌঁসুলি ফাতাও বেনসুউদার সমালোচনা করে মিয়ারমার সরকার। বলা হয়, তিনি মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিকে পদদলিত করার চেষ্টা করছেন।

আইসিসিতে আবেদন করার পর কৌঁসুলি ফাতোও বেনসুদা বলেছিলেন, ‘এটা বিমূর্ত কোনো প্রশ্ন নয়। বরং এই আদালত ওই ঘটনার তদন্ত এবং সম্ভব হলে বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে কি না- তা সরাসরিই জানতে চাওয়া হয়েছে।’ তিনি মনে করছেন, ‘দেশত্যাগে বাধ্য করা যে ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ, তার ধরণ বিবেচনায় নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারিক এখতিয়ারের পক্ষে রুল এলে তাতেও বিষয়টি বিচারের জন্য একটি আইনি কাঠামোয় দাঁড় করানো যাবে।’

অবশ্য আন্তর্জাতিক আইনে দেশত্যাগে বাধ্য করার অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে যে অস্পষ্টতা রয়েছে এবং এ বিষয়ে বিচার করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তাও স্বীকার করেছেন ফাতোও বেনসুদা।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত বছর ২৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর হামলার শিকার হয়ে এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এটিকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ। আর ‘গণহত্যা’ হিসেবে দেখছে ওআইসি।