ইরান ইস্যু: যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই উল্টো চাপের মুখে ট্রাম্প

গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিস্তার রোধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠকে ইরানকে চাপ দিতে গিয়ে উল্টো চাপের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় তিনি ইরানকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বক্তব্য দিলেও অন্য বিশ্ব নেতারা তাতে সাড়া দেননি। বরং তারা ছয় জাতি-গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পাদিত ইরানের পরমাণু সমঝোতার পক্ষে অবস্থান নেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই ট্রাম্প একঘরে হয়ে পড়েন।

বিবিসি জানিয়েছে, বৈঠকের শুরুতেই ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা ও গোলযোগের জন্য ইরানকে দায়ী করে কড়া বক্তব্য দেন। এতে তিনি অভিযোগ করেন, ইরান পরমাণু সমঝোতার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে তা মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর কাজে ব্যয় করছে।

ইরান পরমাণু অস্ত্র বানাতে চায়- এমন দাবি করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তেহরানকে থামাতেই পরমাণু সমঝোতা থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে গেছে। গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিস্তার রোধে দেশটির ওপর অন্যান্য দেশেরও চাপ বাড়ানো উচিত।’

কিন্তু বৈঠকে ট্রাম্পের এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ সব দেশ ও পক্ষ ইরানের পরমাণু সমঝোতার পক্ষে অবস্থান নেয়।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন বলেন, ‘পরমাণু সমঝোতা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা দরকার। ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এ সমস্যার সমাধান হবে না।’

ম্যাক্রনের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, ‘ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে পরমাণু সমঝোতা। তাই এ সমঝোতা টিকিয়ে রাখা এবং তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।’

এরপর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ‘পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধেই ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা করা হয়েছে। কিন্তু এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতি করেছে। এ সমঝোতা রক্ষায় চীনসহ অন্য দেশ ও পক্ষগুলোকে নিয়ে কাজ করছে রাশিয়া।’

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইরানের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকলেও বৈঠকটি শেষ হবার পর এ নিয়ে একটি টুইট করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ। এতে তিনি লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের অপব্যবহার করেছে। এ বৈঠকে দেশটি আরো একঘরে হয়ে পড়েছে। এ থেকে ওয়াশিংটনের শিক্ষা নেয়া উচিত।’

এদিকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি চেষ্টার অভিযোগ আগে থেকেই অস্বীকার করে আসছে ইরান। দেশটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করতেই এ ধরনের অভিযোগ তুলছে।