কাশ্মিরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রীকে গৃহবন্দী, কারফিউ জারি

ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এবং মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দী করা হয়েছে। পুরো কাশ্মির জুড়ে চলমান অস্থিরতার মধ্যেই এ পদক্ষেপ নিলো মোদি সরকার। একইসাথে বিধায়ক সাজ্জাদ গনী লোনকেও গৃহবন্দী করা হয়েছে। সোমবার রাত দেড়টার দিকে তাদের গৃহবন্দী করার পরপরই গোটা জম্মু-কাশ্মিরে কারফিউ জারি করা হয়।

গৃহবন্দী করার পরপরই তারা এক টুইট বার্তায় বিশ্ববাসীকে এ খবর জানিয়েছেন। বহু অনুসন্ধানের পরও তাদেরকে কী কারণে বন্দী করা হয়েছে সে সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেনি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

এর আগে গতকাল রোববার নয়াদিল্লিতে দিনভর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, স্বরাষ্ট্রসচিব, দুই গোয়েন্দা প্রধান অরবিন্দ প্রধান ও সামন্তকুমার গয়াল, জম্মু-কাশ্মীর বিষয়ক অতিরিক্ত সচিব জ্ঞানেশ কুমারের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

তার বৈঠকের পরই কাশ্মিরের দুই প্রভাবশালী নেতাকে গৃহবন্দী করা হয়। এছাড়া কয়েকজন বাম এবং কংগ্রেস নেতাকেও গ্রেপ্তার করেছে সরকার।

কাশ্মিরে 'ভয়ানক' কিছু যে একটা ঘটতে যাচ্ছে গত কয়েকদিন ধরেই তার আলামত পাওয়া যাচ্ছিলো। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কাশ্মিরে জঙ্গি হামলা হতে পারে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। এসব পদক্ষেপ তা প্রতিরোধের জন্যই নেয়া হচ্ছে।

এদিকে গত পরশু হিন্দু তীর্থযাত্রীদের অমরনাথ যাত্রা বন্ধ করার পাশাপাশি পর্যটকদেরকে দ্রুত কাশ্মির ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপর রাজ্যে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হলে গোটা উপত্যকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, কাশ্মিরের বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার ৩৫-ক এবং ৩৭০ ধারা বাতিলের চেষ্টা করছে সরকার। তবে গৃহবন্দী হওয়ার আগে কাশ্মিরের নেতারা এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, ভারত সরকার যদি কাশ্মিরের বিশেষ অধিকার বাতিলের চেষ্টা করে তাহলে সবাই মিলে তা প্রতিহত করবে।

ইতোমধ্যে কাশ্মির জুড়ে ভারতীয় সেনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বেশ কিছু স্পর্শকাতর এলাকাগুলোয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী পাহাড়া দিলেও সব জায়গায় মূলত সেনাবাহিনীর সদস্যরাই দায়িত্ব পালন করছেন। জানা গেছে, মৌখিকভাবে স্থানীয় সবগুলো থানার পুলিশকে অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সব স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কাশ্মির রাজ্যের মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে সরকার। সব ধরনের গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এদিকে আজ ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় কাশ্মির প্রসঙ্গে একটি বৈঠকে হতে যাচ্ছে। বৈঠকে কাশ্মির ইস্যুতে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।