কাশ্মিরের বিশেষ অধিকার কেড়ে নিল ভারত

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরে গত কয়েকদিন ধরে সরকারের পদক্ষেপ দেখে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা যে ধারণা করেছিলেন সেটিই সত্যি বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা মোতাবেক কাশ্মিরকে যে বিশেষ অধিকার দেয়া হতো তা বিলোপ করেছে মোদি সরকার। সোমবার সংসদে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই অধিকার বাতিল করেন।

বিরোধীদের তুমুল বাধা ও বাগ-বিতণ্ডার মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি রামনাথ গোভিন্দের স্বাক্ষর সম্বলিত এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে।

এই বিশেষ সুবিধা বাতিলের ফলে এখন থেকে ভারতের যে কোন নাগরিক কাশ্মিরে জমি কিনতে পারবেন, সেখানে চাকরি করতে পারবেন এবং সেখানে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন।

এর আগে ৩৭০ ধারার সুবাদে শুধুমাত্র কাশ্মিরের স্থায়ী বাসিন্দারাই সেখানে বৈধভাবে জমি কিনতে পারতেন, সরকারি চাকরি করার সুযোগ পেতেন এবং সেখানে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।

এই সিদ্ধান্তের ফলে এখন থেকে জম্মু এবং কাশ্মির কেন্দ্রীয়ভাবে শাসিত রাজ্য হিসেবে পরিচালিত হবে।

এদিকে এই ঘটনার পর কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি টুইট করেছেন যে, এই বিশেষ সুবিধা বাতিলের মাধ্যমে ভারত নিজেদেরকে দখলদার বাহিনী হিসেবে প্রমাণ করেছে।

এর আগে জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এবং মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দী করা হয়। এছাড়া কয়েকজন বাম এবং কংগ্রেস নেতাকেও গ্রেপ্তার করে সরকার।

গৃহবন্দী হওয়ার আগে কাশ্মিরের নেতারা এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, ভারত সরকার যদি কাশ্মিরের বিশেষ অধিকার বাতিলের চেষ্টা করে তাহলে সবাই মিলে তা প্রতিহত করবে।

কাশ্মিরে 'ভয়ানক' কিছু যে একটা ঘটতে যাচ্ছে গত কয়েকদিন ধরেই তার আলামত পাওয়া যাচ্ছিলো। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কাশ্মিরে জঙ্গি হামলা হতে পারে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। এসব পদক্ষেপ তা প্রতিরোধের জন্যই নেয়া হচ্ছে।

এদিকে গত পরশু হিন্দু তীর্থযাত্রীদের অমরনাথ যাত্রা বন্ধ করার পাশাপাশি পর্যটকদেরকে দ্রুত কাশ্মির ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপর রাজ্যে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হলে গোটা উপত্যকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে কাশ্মির জুড়ে ভারতীয় সেনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বেশ কিছু স্পর্শকাতর এলাকাগুলোয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী পাহাড়া দিলেও সব জায়গায় মূলত সেনাবাহিনীর সদস্যরাই দায়িত্ব পালন করছেন। জানা গেছে, মৌখিকভাবে স্থানীয় সবগুলো থানার পুলিশকে অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সব স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।