‘জীবন্ত শহীদ’ জেনারেল সোলায়মানি!

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি যাকে পদক পরিয়ে দিচ্ছেন (বামে) তিনি হলেন জেনারেল কাসেম সোলায়মানি। যিনি ইরানে হাজি কাসেম নামেই অধিক পরিচিত। বর্তমান দুনিয়ায় তাকে এক নম্বর জেনারেল হিসেবে মনে করা হয়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তাকে অর্ডার অব জুলফিকার পদক দিয়েছেন।

জেনারেল সোলায়মানিকে অর্ডার অব জুলফিকার পদক পরিয়ে দিচ্ছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি (বামে), জেনারেল সোলায়মানিকে চুমো খাচ্ছেন সর্বোচ্চ নেতা (ডানে ওপরে) এবং রণাঙ্গনে সাধারণ পোশাকে সোলায়মানি (নিচে ডানে)

ইরানের ইসলামিক রিভ্যলুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) বিশেষ শাখা কুদস ফোর্সের (পবিত্র যোদ্ধা) প্রধান তিনি। বিগত ২০-২২ বছরে তিনি এই বাহিনীকে নিজ দেশের বাইরে সিরিয়া, লেবানন, গাজা, ইয়েমেন, ইরাক, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানসহ অন্তত ১৫-২০টি দেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এর সদস্যরা অর্ডিনারি ফোর্সের বাইরে ইরানি স্বার্থের জন্য লড়তে (ছায়াযুদ্ধ) প্রস্তুত। জেনারেল সোলায়মানি তার কর্মকাণ্ডের জন্য একমাত্র সর্বোচ্চ নেতার কাছে জবাবদিহি করেন। এ কারণে কুদস ফোর্স সম্পর্কে খুব জানেন না ইরানিরাও।

তবে এত বড় জেনারেল হলেও সাধারণ জীবনযাপনই ইরানিদেরকে তার প্রতি আকৃষ্ট করেছে। এমনকি রণাঙ্গনেও সাধারণ সাজে দেখা যায় তাকে। এর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অফার পেলেও তা ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি।

আইএস দমনে বিরাট অবদান রাখা হাজি কাসেম বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে যে অবস্থা তৈরি করেছেন তাতে তার ওপর যার পর নেই ক্ষুব্ধ ইসরায়েল, সৌদি ও আমেরিকা। সে কারণে সিআইএ ও মোসাদের হিটলিস্টে উঠেছে তার নাম।

তেহরান দাবি করছে, সম্প্রতি আশুরা উপলক্ষে ইরানের কেরমান প্রদেশে নিজের জন্মস্থানে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল ইসরায়েল ও আরব গুপ্তচররা। কিন্তু সে ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছে আইআরজিসি।

যাই হোক, ঘরে-বাইরে এত বিপদের মধ্যেও মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে দেশের স্বার্থ তথা আদর্শ (শিয়া- মুসলিম) প্রসারে এগিয়ে যাচ্ছেন জেনারেল সোলায়মানি। যেখানে প্রতিনিয়ত মৃত্যু তাকে হাতছানি দিচ্ছে।

গবেষক আলতাফ পারভেজ এক নিবন্ধে বলেছেন, ইরানের অনেকে ৬২ বছর বয়সী সোলায়মানির মাঝে হজরত আলী রা.-এর বিশ্বাসী সহযোদ্ধা মালিক আল-আশতারের ছায়া দেখেন। তবে তারা এও জানেন, ইতিহাসে মালিক আল-আশতার বিষ প্রয়োগে নিহত হয়েছিলেন। তাই সোলাইমানির জীবন নিয়েও তাদের শঙ্কার শেষ নেই।

হয়তো এ কারণেই আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সোলাইমানিকে অভিহিত করেন ইরানের ‘জীবন্ত শহীদ’ হিসেবে। যিনি রনাঙ্গনে চোখে রেখে কথা বলতে (মোকাবিলা) পছন্দ করছেন।

দাবি করা হয়, আমেরিকা দুই দুইবার জেনারেল সোলায়মানিকে হত্যার সুযোগ পেয়েও তাকে হত্যা করেনি। কারণ হিসেবে বলা হয়, সোলায়মানির ওপর হামলাকে নিজের ওপর হামলা বলে মনে করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। তাই তাকে হত্যা করা হলে বিভিন্ন দেশে থাকা কুদস ফোর্সের সদস্যরা মার্কিন স্বার্থের ওপর মরণ কারণ দেবে।