মান্না দে'র সেই কফি হাউসে বাংলা বলা নিষেধ!

'কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই। কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো সেই, আজ আর নেই।' প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী মান্না দে'র এই গান শুনেনি এমন একজন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে কালজয়ী এ বাংলা গানে যে কফি হাউজের আড্ডার কথা উঠে এসেছে, দেশ বিদেশের দর্শনার্থীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠেছে, সেই কফি হাউজেই নাকি বাংলায় কথা বলা যাবে না, বলতে হবে হিন্দিতে!

কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউজ

গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক পোস্টে এমনটাই অভিযোগ করেছেন ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী নামের এক ভারতীয় তরুণী। আর তার সেই পোস্টকে ঘিরে রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই তরুণীর পোস্টের পর কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের সেই কফি হাউজের সামনে বিক্ষোভ করেছেন বেশ কয়েকজন মানুষ। আর সেই বিক্ষোভে বাংলা ভাষার প্রচার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনও যোগ দেয়।

জানা যায়, গত বুধবার বিকালে দুই বন্ধুসহ ওই কফি হাউজে গিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী। সেখানে গিয়ে এক কর্মীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে চার্জ দেয়া নিয়ে বিবাদের সৃষ্টি হয় তাদের। এ বিবাদকে কেন্দ্র করেই কফি হাউজের পক্ষ থেকে তাদের বাংলায় কথা বলতে নিষেধ করা হয় এবং হিন্দিতে কথা বলতে বলা হয়।

ইন্দ্রাণী বলেন, তারা প্রতি সপ্তাহে একদিন অন্তত ওই কফি হাউজে যান। অতীতে অনেকবার সেখানে মোবাইলে চার্জ দিয়েছেন। সে সময় কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু বুধবার চার্জ দিতে চাইলে তাদের বলা হয় এখানে মোবাইলে চার্জ দেয়া যাবে না। এর কারণ জানতে চাইলে সেখানকার এক কর্মী মালিকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। অথচ তিনি জানতেন, কফি হাউজটির একক কোন মালিকানা নেই বরং এটি একটি সমবায় সমিতি চালায়।

ওই তরুণীর দাবি, কফি হাউজের কর্মীর কথামতো কথিত মালিকের সঙ্গে কথা বলতে যান তারা। সেখানে কথিত মালিককে মোবাইলে চার্জ দেয়ার কথা জানালে তিনি হিন্দিতে কথা বলতে বলেন। কারণ তিনি বাংলা বোঝেন না। তারপর ফের হিন্দি ভাষায় চার্জ দেয়ার অনুরোধ জানালে ওই ব্যাক্তি তাদের বলেন, 'হামনে এক বার বোল দিয়া, নেহি হোগা। আব নিকলো রুমসে। ইস রুমমে বাংলা নেহি চলেগা।' (আমি একবার বলছি হবে না। এখন রুম থেকে বের হয়ে যাও। এই রুমে বাংলায় কথা বলা চলবে না)।

এরপর মান্না দে'র গানের প্রসঙ্গ তুলে ইন্দ্রাণী বলেন, যে মান্না দে'র গান শুনে বর্তমান প্রজন্ম এই কফি হাউজ চিনেছে, তিনিও তো একজন বাঙালি। তখন কফি হাউজের কথিত মালিক বলেন, মান্না দে কৌন হ্যায়? (মান্না দে কে)? কফি হাউজের সেই কর্মী এর উত্তরে বলেন, 'জানি না। অত বকব না। এখানে বাংলা বলা যাবে না, বেরিয়ে বাংলা বলুন।'

এ ঘটনায় স্থানীয় অধিকার কর্মী দীপাঞ্জন অনন্যা বসু বলেন, বাঙালিদের মানুষদের চেতনার একটি বিশেষ জায়গা নিয়ে অবস্থান করছে কলেজ স্ট্রিটের এই কফি হাউজ। সেখানে কাউকে বাংলায় কথা বলতে নিষেধ করা হচ্ছে, এটা ভাবাই যায় না।

তবে কফি হাউস পরিচালনা সমিতির সম্পাদক তপন পাহাড়ি বলেন, এখানকার কোন কর্মী এমন ধরনের কথা বলতে পারেন এটা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তারপরও কেউ এমনটা করলে ওই তরুণী পরিচালনা সমিতিতে অভিযোগ জানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটা না করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্ট দিয়েছেন। তাই এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় অভিযোগ জানান তিনি।

এদিকে ওই তরুণীর দাবি, কফি হাউজে তাদের সঙ্গে যে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে তার প্রতিবাদ জানাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন তিনি।