ক্রাইস্টচার্চের ঘটনা যেন জামিয়া মিলিয়ায়!

ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে দেশটির বিভিন্ন এলাকায়। জামিয়া মিলিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় তার মধ্যে অন্যতম। এর আগে সেখানকার ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্রদের ওপর মারপিট করেছিল পুলিশ। এবার সেই জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলির ঘটনা ঘটলো।

স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, বৃহস্পতিবার জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে রাজঘাটের প্রতিবাদ সমাবেশে আচমকা গুলির ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির এক ছাত্র।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গুলি করার আগে অভিযুক্ত চেঁচিয়ে বলে উঠে, “ইয়ে লো আজাদি!” অর্থাৎ এই নাও আজাদি।

খবরে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত বন্দুকধারীর নাম রামভক্ত গোপাল। এই কাণ্ড ঘটানোর আগে ফেসবুকে তিনটি লাইভ ভিডিও শেয়ার করেছে সে।

ভিডিওতে সে দাবি করেছে, নিজের ধর্ম রক্ষা করতে যাচ্ছে সে। ‘জামিয়ার গদ্দারদের খেল খতম’ করতে সে গুলি চালাবে বলে দাবি করে প্রকাশ্য ভিডিওতে। তাতে বহু মানুষ সমর্থনও করে তাকে।

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত বন্দুকধারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার পর আহত ওই শিক্ষার্থীকে স্থানীয় হোলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার হাতে গুলি লেগেছে। সেখানেই চিকিৎসা চলছে তার।

জানা গেছে, তার নাম শাদাব আলম। তিনি জামিয়ার মাস কমিউনিকেশনস বিভাগের ছাত্র।

এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যাতে যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে, তাই ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে যানবাহনের রুট।

প্রসঙ্গত, এর আগেও ১৫ ডিসেম্বর সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়েছিল জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। তখনও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল ক্যাম্পাসে ঢুকে কঠোর অভিযান চালানোর। আবারো সেই রকমের ঘটনা ঘটলো।

খবরে বলা হয়েছে, এদিন মহাত্মা গান্ধীর ৭২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজঘাটের দিকে মিছিল করে যাচ্ছিলেন জামিয়া মিলিয়ার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। সেই সময়েই ‘ইয়ে লো আজাদি’ বলে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে যায় ওই ব্যক্তি।

উল্লেখ্য, গত বছর নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের ওপর নির্বিচার গুলি চালায় ডানপন্থী এক উগ্রবাদী খ্রিস্টান সন্ত্রাসী। প্রায় অর্ধশত মুসল্লিকে গুলি করে হত্যার ঘটনা সে ফেসবুকে লাইভ প্রচার করে। সেও হামলার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে প্রচার চালায়।

এদিকে, আন্দোলনকারীদের দাবি, এই মিছিলের অনুমতি নেওয়া ছিল অনেক আগে থেকেই। মিছিল ঘিরে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য আগে থেকেই জামিয়ার বাইরে পুলিশ মোতায়েন ছিল। বিক্ষোভকারীদের আটকাতে ব্যারিকেডও বসানো হয়। তাই রাস্তার ওপরেই বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অভিযুক্ত প্রথমে আকাশের দিকে তাক করে ফায়ারিং করে। তার পর আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় সে। গুলি লাগে এক ছাত্রের হাতে।

তবে প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশি নিরাপত্তা টপকে, ব্যারিকেড পার করে, পিস্তল হাতে মিছিলের একেবারে সামনে কীভাবে চলে আসে ওই বন্দুকধারী?