আপনি পড়ছেন

করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) জর্জরিত চীন। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। চীন সরকারের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য মোতাবেক প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৬২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ইতোমধ্যে চীনের বাইরে ২৮টি দেশে সীমিত আকারে ছড়িয়েছে ভয়াবহ এ ভাইরাস। ফলে চীনের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন অন্যান্য দেশও। চীনের এই সংকট প্রভাব ফেলেছে দেশটির অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে।

covid 19 virus

চীনের অর্থনীতি তলানিতে

কোভিড-১৯'র ব্যাপক প্রভাব পড়েছে দেশটির অর্থনীতিতে। একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে দেশটির অর্থনীতি। ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশটির এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৩ লক্ষ কোটি টাকা।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ভাইরাসের থাবায় গত তিন দশকের হিসাবে সর্বনিম্ন অবস্থায় আছে চীনের অর্থনীতি। দেশটির বিভিন্ন খাতে কমে গেছে লাভের পরিমাণ। ভাইরাস আতঙ্কে অন্যান্য দেশের অফিসগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মীদের সেখান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। চীনের শেয়ারবাজারেও বড় পতন লক্ষ করা গেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, গত এক মাসে ভাইরাসের কারণে চীনের ক্ষতি হয়েছে ৪২০ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৩ লক্ষ কোটি টাকা। ভাইরাস সংক্রমণ চীনের বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রীতিমত একটি যুদ্ধে নেমেছে দেশটি। 

কীভাবে ছড়ালো ভাইরাসটি

গত ডিসেম্বরে প্রথম ভাইরাসটি শনাক্তের পর সবাই ধারণা করছিল এটি উহানের একটি সামুদ্রিক মাছের বাজার থেকে ছড়িয়েছে। এরপর কেউ কেউ দাবি করেন, ভাইরাসটি বাদুর থেকে ছড়াতে পারে।

covid 19 virus02

এ বিষয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে তারা দাবি করে, উহানের একটি ভাইরাস ল্যাব থেকেই কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে। এরপর তা মাছের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করেছে।

অন্যদিকে, দেশটির গুয়াংজু প্রদেশের সাউথ চায়না এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দাবি করেন, চীনে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সাপ, বাদুড় কিংবা কোনো সামুদ্রিক মাছ নয়, বরং বিলুপ্তপ্রায় প্যাঙ্গোলিন বা বনরুই থেকে মানবদেহে ছড়িয়েছে। এক হাজারেরও বেশি বন্যপ্রাণীর নমুনা পরীক্ষা করার পর এ অভিমত দেন তারা।

উহানের বর্তমান অবস্থা

ভাইরাসটির প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটে হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। এরপর থেকে প্রতিদিনই শত শত মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। সেইসঙ্গে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই শতাধিক লোকের মৃত্যু হচ্ছে। যাদের সিংহভাগই উহানের বাসিন্দা।

সর্বশেষ তথ্যে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চীনে ভাইরাসের কারণে মারা গেছে ১৪৩ জন। এদের মধ্যে ১০৭ জনই উহানের। আর এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া ১৬২৯ জনের মধ্যে ১১২৩ জনই উহানবাসী।

wuhan coronavirus effected

রেহাই পাননি চিকিৎসকরাও

আক্রান্তদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৭১৬ জন চিকিৎসক ও নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে মারা গেছেন ৬ জন। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে সিএনএন।

ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের অধ্যাপক বেনজামিন কাউলিং বলেছেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব চিকিৎসকদের। অথচ তারাই এখন উল্টো চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।

চীনের বাইরেও যেসব দেশে ভাইরাস পাওয়া গেছে

চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে ২৮টি দেশে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। সেসব দেশে এখন পর্যন্ত ৫৭০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। শনাক্ত হওয়া দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে জাপানে। দেশটির একটি যাত্রীবাহী জাহাজেই ২০০ জনের মতো রোগী শনাক্ত হয়েছে।

diamond princess corona effected

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি এ ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত সেখানে ১৬ জন শনাক্ত হয়েছে। সেইসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতেও হানা দিয়েছে এই ভাইরাস।

এ ছাড়া হংকংয়ে দুই জন এবং ফিলিপাইন, জাপান ও ফ্রান্সে ভাইরাসটিতে একজন করে মারা গেছেন।

বাংলাদেশে ভাইরাসের প্রভাব

বাংলদেশে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্তের সন্ধান না পাওয়া গেলেও সিঙ্গাপুরে পাঁচজন বাংলাদেশি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছে। তাদের চিকিৎসার ভার বহন করছে সিঙ্গাপুর সরকার।

এদিকে, চীন থেকে আসা বাংলাদেশিদের রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাদের কারো মধ্যে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)। আর সে কারণে আজ শনিবার তাদের বাড়ি ফেরার কথা রয়েছে।

ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে তিনজন ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের একজনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে এদের কারো শরীরে কোভিড-১৯ এর উপস্থিতি পায়নি আইইডিসিআর।

নামকরণ নিয়ে বিভ্রান্তি

ভাইরাসটির বৈজ্ঞানিক নাম ২০১৯-এনসিওভি। অথচ এটিকে সবাই করোনাভাইরাস হিসেবেই চেনে। এর নামকরণের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ঘটনা। জানা গেছে, বছরের শুরুতে গুগলে করোনা বিয়ার ভাইরাস লিখে সার্চ দেয়া বেড়ে যায়।

প্রাথমিকভাবে মানুষের ধারণা হয়েছিল, মেক্সিকান জনপ্রিয় পানীয় 'করোনা এক্সট্রা বিয়ার' থেকে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে। যার কারণেই ভাইরাসটির নাম করোনাভাইরাস রাখা হয়।

একটি পানীয় নিয়ে জনমনে ভীতি তৈরি হওয়ায় ওই বিয়ার কোম্পানি থেকে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। করোনা একটি ল্যাতিন শব্দ, আর করোনা বিয়ার মেক্সিকোতেই উৎপাদিত হয়। যার কারণে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ায়।

who named coronavirus as covid 19

করোনা শব্দটি ল্যাতিন শব্দে এসেছে গ্রাচীন গ্রিক শব্দ করোন থেকে। করোন অর্থ পুষ্পমাল্য বা পুষ্পমুকুট। এ ছাড়া জ্যোতির্শাস্ত্রেও করোনা শব্দের ব্যবহার আছে। সূর্যের চারপাশে উজ্জ্বল যে আলোর বলয় তৈরি হয় (বিশেষ করে গ্রহণের সময় দেখা যায়) তা মুকুটের মতো দেখা যায় বলে জ্যোতির্বিদরা একে করোনা বলেন।

২০১৯-এনসিওভি ভাইরাসটি যখন ইলেকট্রন অনুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা হয় তখন ভাইরাসটির মূল দেহ ঘিরে ট্রাম্পেট বা ফানেলের মতো অসংখ্য কাঁটা দেখা যায়। যা দেখতে মুকুটের মতোই লাগে। যার কারণে এ ভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে করোনাভাইরাস।

পরে চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভাইরাসটির নাম রাখে নভেল করোনা নিউমোনিয়া ভাইরাস।

কিন্তু সর্বশেষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনা থেকে কো (co), ভাইরাস থেকে ভাই (vi), ডিজিজ থেকে ডি (d) আর ২০১৯ সালে রোগটি দেখা দেয়ায় ১৯ (19) নিয়ে এর নতুন নাম দেয় কোভিড-১৯ (covid-19)।

কারা আক্রান্ত হচ্ছেন?

ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই বয়স্ক ও শিশু, তবে তরুণদের মধ্যেও বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। এক্ষেত্রে যেসব তরুণের মধ্যে স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছে।

travel to china

মাস্ক কী কার্যকরভাবে ভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে এবং এটি কতবার পরিবর্তন করতে হয়?

মাস্ক পরলেই যে ভাইরাস প্রতিরোধ করা যায়, এমনটা খুব কমই হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং আশপাশের জায়গাগুলো পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়মিত হাত ধোয়া এবং অবশ্যই মুখের কাছে হাত আনার আগে সেটি ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। আর এ অভ্যাস মাস্কের চেয়ে বেশি কার্যকর।

ভাইরাসের জন্য ইনকিউবেশন সময়কাল বা সুপ্তিকাল কত?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে এর লক্ষণগুলি প্রকাশের আগ পর্যন্ত সময়ের পরিধি ২ থেকে ১০ দিনের মতো হয়ে থাকে। তাই ইনকিউবেশন পিরিয়ড বা সুপ্তিকাল সম্পর্কে জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ওই সময়ের মধ্যে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এবং নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে সময় পান।

অর্থাৎ চিকিৎসকরা আরো কার্যকর কোয়ারান্টিন ব্যবস্থা চালু করতে পারেন। যেমন- কেউ যদি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে তাহলে তাদের আলাদা করে রাখা যাবে। যেন তাদের মধ্যে ভাইরাসটি সনাক্ত হলেও তা অন্য কারো মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে না পারে।

ভাইরাসে যারা আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে উঠছেন, তারা কি পুরোপুরি সুস্থ হতে পেরেছেন?

হ্যাঁ, যারা ভাইরাসটির সংস্পর্শে এসেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই কেবল হালকা কিছু লক্ষণ অনুভব করেছেন। এর মধ্যে জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে। বেশিরভাগই সম্পূর্ণ সেরে উঠছেন। তবে এটি বয়স্ক ব্যক্তি বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব বড় ধরনের ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে।

20 people who won coronavirus

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভাইরাসের হালকা লক্ষণ দেখা দেয়ার পর পুরোপুরি সেরে উঠতে এক সপ্তাহের মতো সময় লাগতে পারে।

চীনের উহান শহর থেকে বিভিন্ন দেশে পাঠানো জিনিসপত্রের মাধ্যমে কী ভাইরাস ছড়াতে পারে?

জিনিসপত্রের মাধ্যমে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে কি না সে সম্পর্কে এখনো কোনো প্রমাণ নেই। তবে এটি মানুষের হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

সাধারণত শীতল ভাইরাসগুলো মানুষের দেহের বাইরে ২৪ ঘণ্টারও কম সময় বাঁচে। তবে কনোরোভাইরাস (অন্ত্রের একটি গুরুতর পোকা) শরীরের বাইরে কয়েক মাস টিকে থাকতে পারে।

এই শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা প্রতিরোধ করার জন্য কী টিকা দেয়া সম্ভব?

এখনো এমন কোনো টিকা আবিষ্কার করা যায়নি। যা দিয়ে কোভিড-১৯ থেকে মানুষকে রক্ষা করা যেতে পারে। তবে গবেষকরা এর প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের টিকা পেতে দেড় বছর সময় লাগবে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.