সব নিন্দা প্রত্যাখ্যান এরদোয়ানের

ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হাজিয়া সোফিয়া জাদুঘর থাকবে নাকি মসজিদে রূপান্তর হবে এ নিয়ে তুর্কি আদালতে চলছে মামলা। রায় না হলেও আদালত এই স্থাপত্যের জাদুঘরের মর্যাদা প্রত্যাহার করেছে। এর পরই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে তুরস্কের এমন সিদ্ধান্তের নিন্দা আসতে শুরু করে। তবে এসব নিন্দা প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান।

হাজিয়া সোগিয়ার সামনে নামাজ আদায় করছেন তুর্কিরা

তিনি বলেন, এই স্থাপত্য কীভাবে ব্যবহৃত হবে সে সিদ্ধান্ত নেয়া তুরস্কের সার্বভৌম অধিকার।

আল জাজিরার বরাতে জানা যায়, ১৯৩৪ সাল থেকে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসা হাজিয়া সোফিয়াকে জাদুঘরে রূপান্তর করার ইচ্ছা বেশ কয়েক বছর ধরেই ব্যক্ত করছেন এরদোয়ান। ২০১৮ সালে তিনি এই স্থাপত্যে বসে পবিত্র কোরআন তেলওয়াতও করেছেন।

প্রায় ১ হাজার ৫০০ বছর আগে ৬ষ্ঠ খ্রিস্টাব্দে হাজিয়া সোফিয়ার নির্মাণ করেন বাইজেন্টাইন সম্রাট জাস্টেনিয়ান। তখন এটি চার্চ হিসেবেই ব্যবহার হয়েছে। অটোম্যান সম্রাট মেহমেদ ১৪৫৩ সালে ওই এলাকা দখলে নিলে তা মসজিদে রূপান্তর করা হয়। এরপর থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত বিখ্যাত এই স্থাপত্য মসজিদ হিসেবেই ব্যবহার হয়েছে।

হাজিয়া সোফিয়া

১৯৩৪ সালে আধুনিক তুরস্কের যাত্রাকালে তৎকালীন মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয়, এটি মসজিদ থাকবে। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্থাপত্যটিকে জাদুঘর করা হয়। গত শুক্রবার তুর্কি আদালত সেই জাদুঘরের তকমা প্রত্যাহার করে জানায়, দলিলের চুক্তি অনুযায়ী হাজিয়া সোফিয়ার অন্যকোনো পরিচয় বহন করা অবৈধ।

আল জাজিরা বলছে, শুক্রবার আদালতের এই আদেশের পর এরদোয়ান এক ঘোষণায় বলেন, হাজিয়া সোফিয়া আবারো নামাজের জন্য খুলতে যাচ্ছে। আগামী ২৪ জুলাই সেখানে নামাজ আদায় করা হবে এমন ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। শনিবার উৎসুক জনতা বিখ্যাত এই স্থাপত্যের সামনে নামাজও আদায় করেছেন। আর আদালত জাদুঘরের স্ট্যাটাস বাতিল করার দিনই দীর্ঘ ৮৮ বছর পর সেখানে আজান দেওয়া হয়।

তুর্কি জনগণ এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেও রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপকে ভালোভাবে নেয়নি। তারা হাজিয়া সোফিয়াকে জাদুঘর রাখার আহ্বান জানিয়েছিল তুরস্ককে।

শুক্রবার আদালতের আদেশের পর উভয় রাষ্ট্র থেকে নিন্দা এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মরগান ওরতাগুস বলেছেন, তুর্কি সরকারের এমন আচরণে আমরা আশাহত হয়েছি। তারা হাজিয়া সোফিয়ার বর্তমান পরিচয় মুছে দিতে চায়। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এই স্থাপত্যটিতে সকলের প্রবেশ নিশ্চিত রাখতে হবে। তুর্কি সরকার এ বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকলেও তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে।

এ ছাড়া গ্রিস, ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চেস থেকেও এই পদক্ষেপের নিন্দা এসেছে।