অমর্ত্য সেন: ভারতে মুসলিমদের অধিকার খর্ব হচ্ছে

ভারতে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অধিকার হননে দেশটির সরকারের কর্তাব্যক্তিরা অতিমাত্রায় তৎপর বলে মন্তব্য করছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। চলতি বছরের জার্মান বুক ট্রেডের শান্তি পুরস্কার উপলক্ষে সম্প্রতি দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। খবর পার্স টুডে।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন- ফাইল ছবি

অমর্ত্য সেন বলেন, ভারতে কয়েকশ বছর ধরে মুসলিম ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা একসঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ‘চরমপন্থী হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক সংগঠনের’ আচরণের কারণে এ শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে। এসব সংগঠন ভারতে বসবাসকারী মুসলিম ধর্মালম্বীদের বিদেশি হিসেবে গণ্য করার চেষ্টা করছে। মুসলিমরা বিভিন্নভাবে ভারতের ক্ষতি করে চলেছে এমন দোষও তাদের ঘাড়ে দিচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, মুসলিমদের হেয় করা এসব আচরণে ইন্ধন দিচ্ছে চরম হিন্দু রাজনীতির ক্রমবর্ধমান শক্তি। ফলে প্রতিনিয়ত সমাজে ব্যাপকভাবে বাড়ছে গোষ্ঠীগত বিচ্ছিন্নতা ও ধর্মাশ্রিত বৈরভাব।

নোবেলজয়ী এ অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, বর্তমান সরকার সংশোধিত বেআইনি কার্যকলাপ নিবারণ (ইউএপি) আইনের মাধ্যমে যখন যাকে খুশি ‘সন্ত্রাসবাদী’ বানিয়ে দিচ্ছে। অথচ এসব অভিযুক্তরা সাধারণত গান্ধী প্রবর্তিত অহিংস ধারা অনুসরণ করেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করছেন। বিশেষত ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিরোধে এভাবেই আন্দোলন করেছে ছাত্র সংগঠন।

অমর্ত্য সেন

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ইউএপি আইনে ‘সন্ত্রাসবাদী’ অভিযুক্ত করে দিল্লির জওহর লাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুসলিম গবেষক ওমর খালিদকে গ্রেপ্তার করে জেলে রাখা হয়েছে। অথচ ওমর ধর্মনিরপেক্ষ দিকটিকে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাদের লাঠিপেটা করা হলে তারা ভারতের জাতীয় পতাকা ওড়াবেন। তাদের বুকে গুলি করা হলে তার জবাবে দেশটির সংবিধান তুলে ধরবেন।

অমর্ত্য সেন আরো বলেন, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের শিল্প সংস্কৃতি মিলেই তৈরি হয়েছে আজকের ভারতীয় সংস্কৃতি। এ সমন্বয় দেখা যায় সাহিত্য থেকে সঙ্গীত বা স্থাপত্য থেকে চিত্রকলা সব জায়গায়। ভারতীয় ছাড়া অন্যান্যরাও যাতে হিন্দু শাস্ত্রগুলো পড়তে পারেন সেজন্য তর্জমার কাজ শুরু করেছিলেন সম্রাট শাহজাহান ও মমতাজের জ্যেষ্ঠপুত্র। অথচ বর্তমান সরকার স্কুলের পাঠ্যবই থেকে মুসলিমদের অবদান মুছে দিচ্ছে। পরিবেশন করছে মনগড়া ইতিহাস।