জাতীয় সঙ্গীত বদলের প্রস্তাবে ভারতে ‘তুলকালাম’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘জনগণমন’ গানটি জাতীয় সঙ্গীত করেছে ভারত। এটি পরিবর্তন করে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সঙ্গীতকে জাতীয় সঙ্গীত কারার দাবি তুলেছে দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুব্রামানিয়াম স্বামী ও সুভাষচন্দ্র বসু

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা এক চিঠিতে এই প্রস্তাব দিয়েছেন দলটির প্রবীণ ও প্রভাবশালী নেতা সুব্রামানিয়াম স্বামী। তার মতে, জাতীয় সঙ্গীতে থাকা সিন্ধু শব্দের কোনো প্রাষঙ্গিকতা নেই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অর্থ নেই গানটির আরো কয়েকটি শব্দের।এ ছাড়া কাকে উদ্দেশ করে গানটি লেখা হয়েছে, তাও স্পষ্ট নয়।

সুব্রামানিয়াম স্বামীর প্রস্তাব, ১৯৪৩ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের গাওয়া ‘শুভ সুখ চ্যায়েন’ গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত করা হোক। তার পাঠানো এমন প্রস্তাবনার চিঠির পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোদি।

এ নিয়ে ভারতজুড়ে নানা ধরনের বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, ঘটনাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রীও হয়তো জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের পক্ষে। তিনি সত্যিই স্বামীর প্রস্তাবটি বিবেচনায় নিয়েছেন, তা না হলে প্রাপ্তির কথা স্বীকারের অর্থ কী?

নরেন্দ্র মোদি ও মমতা বন্দোপাধ্যায়

বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তারা বলছে, বাঙালি ভাবাবেগের কোনো মূল্য নেই বিজেপির কাছে, তার প্রমাণ- বাঙালি কবির লেখা গানকে বদলানোর প্রস্তাব।

সাম্প্রতিক এক জনসভায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জাতীয় সঙ্গীত বদলে গেলে ওদেরই উল্টে দেয়া হবে। এরপর বাঙালি বিদ্বজ্জনেরাও বলতে শুরু করেছেন, কয়েকটি শব্দের কথা বলে গানটি বদলানোর দাবি অর্থহীন। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ঠিক থাকলে সংস্কৃতির রাজনীতিও যথাযথ থাকবে।

ডয়চে ভেলে জানায়, এর ফলে রাজ্যটি জয়ে মরিয়া বিজেপি এখন তা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে। এ জন্য ইদানীং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে দলটির শীর্ষ নেতারা প্রায়ই বাংলার মনীষীদের নাম নিচ্ছেন। এর মাধ্যমে দলটি বাঙালি সংস্কৃতিতে ‘বহিরাগত’র তকমা মুছতে চাইছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার দৃশ্য

তবে বিজেপি বলছে, যেকোনো বিষয়ে যে কেউ প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখতে পারেন, প্রস্তাবও পাঠাতে পারেন। তবে সেটাকে সরকারের সিদ্ধান্ত ভাবার কোনো কারণ নেই। খারিজ করা একটি বিষয় নিয়ে তৃণমূল অযথাই হইচই করছে।

বিশ্লষকরা বলছেন, বিজেপি নেতা স্বামীর জাতীয় সঙ্গীত বদলের প্রস্তাবের সঙ্গে হিন্দুত্ববাদী সংঘ পরিবারের মূল আদর্শের সম্পর্ক রয়েছে। ‘জনগণমন’ গানে বিবিধের মাঝে মিলনের ঐতিহ্য প্রতিফলিত হয়েছে, রবীন্দ্রনাথও উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিরোধী ছিলেন। এ কারণেই বহুত্ববাদের বিরোধী গেরুয়া শিবির চাইছে আদর্শগতভাবে বিরোধী গানটি বদল করতে, এটি তাদের রাজনীতির অংশ।