সংবাদ সম্মেলনে গ্রিস-তুরস্ক ‘কাইজা’

তুরস্ক ও গ্রিসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সম্পর্কের বরফ গলার আভাস মিলেছিল। তবে ভূমধ্যসাগরের জলসীমার বিরোধসহ নানা কারণে জমে থাকা দূরত্ব কমবে- এমন প্রত্যাশা উবে গেছে বৃহস্পতিবারের (১৫ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলনে। আলজাজিরা যে সংবাদ সম্মেলনকে রীতিমতো ‘সংঘর্ষক্ষেত্র’ আখ্যায়িত করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে গ্রিস-তুরস্ক ‘কাইজা’

দীর্ঘ প্রায় এক বছর পর আঙ্কারায় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু এবং গ্রিসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোস ডেনডিয়াস দুই দেশের উত্তেজনা কমনোর উদ্দেশে বৈঠক করেন। বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে কূটনীতির রীতিনীতি ভেঙে তারা দুজন প্রকাশ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থাকেন।

এক পর্যায়ে ন্যাটোর দুই প্রতিবেশী দেশ গত বছরের আগস্টে বিতর্কিত ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের জাহাজের সাথে সংঘর্ষে যুদ্ধাবস্থার প্রসঙ্গ তুলে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। অথচ সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই মেভলুত আঙ্কারার ‘আলোচনা ফলপ্রসূ’ হয়েছে দাবি করে গ্রিসের প্রশংসা করেন। গ্রিসের পররাষ্টমন্ত্রীও সৌহার্দ্য দেখান।

কাভুসোগলু বলেন, ‘গঠনতান্ত্রিক আলোচনার মাধ্যমে গ্রিসের সাথে বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোর সমাধান করা যেতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এজন্য পরস্পরের প্রতি দোষারোপ ও উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রত্যাহার করা জরুরি। উভয় দেশের সংখ্যালঘুদের শান্তিতে বসবাস সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

কিন্তু নিকোস ডেনডিয়াস তার বক্তব্যের শুরুতেই তুরস্কের সাথে দীর্ঘদিনের যেসব বিরোধ চলে আসছে, তা তুলে ধরেন। এতে সাগরে প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান থেকে শুরু করে গ্রিকের ক্যাথলিক খ্রিস্টান সংখ্যালঘু, আকাশসীমা লঙ্ঘন এবং অভিবাসী নিয়ে তুরস্কের অবস্থানে তোপ দাগেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে গ্রিস-তুরস্ক ‘কাইজা’

৩৫ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে ডিনডিয়াস কাভুসোগলুর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিরোধপূর্ণ বিষয়ে গ্রিসের অবস্থান স্পষ্ট এবং আপনি (কাভুসোগলু) এবারই প্রথম শুনছেন এমন নয়।’ জবাবে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি যদি আমার দেশ ও জনগণকে অভিযুক্ত করতে থাকেন, আমাকেও এর জবাব দিতে হবে। আপনি যদি চান এ উত্তেজনা দীর্ঘ হোক, আমাদেরও কোনো আপত্তি নেই।’

এ পর্যায়ে ডিনডিয়াস জানান, তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান গ্রিস সমর্থন করে। তবে তা কোনোভাবেই গ্রিসের সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়ে নয়। সার্বভৌমত্বে আঘাতের চেষ্টা করা হলে তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকি দেন তিনি।

এরপরই তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডিনডিয়াসের বক্তব্য ‘অগ্রহণযোগ্য’ এবং ‘উস্কানিমূলক’ আখ্যায়িত করেন। বৈঠকে গ্রিস ঘরোয়া বিষয় তুলেছে। কম যান না গ্রিসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ‘কাভসোগলুর বক্তব্যে আমি হতবাক যেন এজেন ও ভূমধ্যসাগরে কিছুই ঘটেনি।’

এভাবেই দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পুরো সংবাদ সম্মেলনে কথার যুদ্ধ চালান। ভূমধ্যসাগর থেকে তেল ও গ্যাস তোলা এবং সাইপ্রাস নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।