মলদ্বারে পাইলসের সমস্যায় অনেকে ভুগে থাকেন। এর মধ্যে অনেকেই না বুঝে ভুল চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সমস্যাটি জটিল করে তোলেন। পাইলস বা হেমোরয়েড হচ্ছে মলদ্বারের নিচের অংশে এক ধরনের রক্তের গুচ্ছ- যেটা একটা দানার মতো ফুলে যায়। মল ত্যাগ বা মল ত্যাগ না করলেও সেখান থেকে প্রায়ই রক্তপাত হয়।

piles

পাইলসের সঠিক কোন কারণ জানা না থাকলেও ধারণা করা হয়, দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া, শাকসবজী ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার এবং পানি কম পান করা, অতিরিক্ত ওজন, গর্ভাবস্থা, লিভার সিরোসিস, মল ত্যাগে বেশী চাপ দেয়া, অতিরিক্ত মাত্রায় লেকজেটিভের ব্যবহার, টয়লেটে বেশী সময় ব্যয়, বৃদ্ধ বয়স, পরিবারে কারও পাইলস থাকা, ভার উত্তোলন অথবা দীর্ঘ সময় বসে থাকার কারণে পাইলস হয়।

মলদ্বার দিয়ে রক্ত আসা মানেই পাইলস নয়। চিকিৎসকই তা নিশ্চিত করতে পারবেন। পাইলসের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হল, মলত্যাগের সময় ব্যথাহীন রক্তপাত হওয়া, মলদ্বারে জ্বালাপোড়া, যন্ত্রণা বা চুলকানি এমনকি কখনও কখনও মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে। এর পরের পর্যায়ে মলদ্বারের ফোলা বাইরে বের হয়ে আসতে পারে আবার নাও আসতে পারে। আর বের হয়ে আসলেও আপনা-আপনি ভেতরে চলে যায়।

তবে এর চাইতে আর একটু খারাপ পর্যায় হলে তা হাত দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে হয় এবং মারাত্নক পর্যায় হলে তা আর ভেতরে প্রবেশ করানো যায় না। বাইরে একটি টিউমার বা মাংসপিণ্ডের মত কিছু একটা সবসময় বের হয়ে থাকবে। যা মলত্যাগে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ব্যথা হবে, এমনকি গ্যাংগ্রিন বা অন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। মলদ্বারের বাইরেও পাইলস হতে পারে। এর লক্ষণগুলো হল মলদ্বারের বাইরে ফুলে যাওয়া যা হাত দিলে স্পর্শ ও অনুভব করা যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে রক্তপাত বা মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে।

উপরের উপসর্গগুলো দেখলে অথবা যদি মনে হয় পাইলসের সমস্যা হচ্ছে তবে একজন অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি। সাধারণ ডাক্তার নয় বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার কারণ হল অ্যানাল ক্যানেলের মত জটিল জায়গাটি সাধারণ ডাক্তাররা না বুঝেই এসিড দিয়ে চিকিৎসা করেন যা হীতে বিপরীত হয়ে অ্যানাল ক্যানেল নষ্ট হয়ে যায়। তখন চিকিৎসা করা অনেক কঠিন হয়ে যায়। পরবর্তীতে অ্যানাল ক্যান্সার পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। সুতরাং, পাইলস বিশেষজ্ঞ বলতে কোলোরেক্টাল সার্জনের কাছেই যেতে হবে।

পাইলসের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগটি কোন পর্যায় আছে। বেশিরভাগ সময় এখন আর অস্ত্রোপচার লাগে না। পাইলসের নানা রকম চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। ঔষধ ব্যবহার, মিনিমাল ইনভেসিভ চিকিৎসা, শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে পাইলস ভালো হয়। এছাড়াও পাইলসের আরোও যেসব চিকিৎসা রয়েছে তা হলো, রাবার ব্যান্ড লাইগেশন, ইনজেকশন, কোয়াগুলেশন (ইনফ্রারেড, লেজার, বাইপোলার)।

প্রতিরোধ ও জীবনযাপন

উচ্চ আশঁযুক্ত খাবার, ফলমূল এবং শাক-সবজি বেশি করে খেতে হবে। দৈনিক ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করতে হবে। তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। প্রতিদিন মলত্যাগের অভ্যাস যেন থাকে। মলত্যাগের সময় কষা হলে বেশি চাপ প্রয়োগ করা বা চেপে রাখা যাবে না। দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা যাবে না। ব্যায়াম কষাভাব দূর করতে সাহায্য করবে। কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।

খোসাহীন শস্য, চর্বিযুক্ত খাবার, মসৃণ চাল, কলে ছাঁটা আটা, ময়দা, চা, কফি, চীজ, মাখন, চকোলেট, আইসক্রীম, কোমল পানীয়, পরোটা, লুচি, চিপস ইত্যাদি খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। এর বদলে তাজা শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, সালাদ, দধি, পনির, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, টকজাতীয় ফল, পাকা পেপে, বেল, আপেল, কমলা, খেজুর, ডিম, মাছ, মুরগীর মাংস, ভূসিযুক্ত (ঢেঁকি ছাঁটা) চাল ইত্যাদি খেতে হবে। পায়ুপথ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কুসুম গরম পানি দিয়ে দিনে কয়েকবার জায়গাটা মুছতে/ভিজাতে হবে। ফোলা কমানোর জন্য আক্রান্ত স্থানে বরফ ঘষা যেতে পারে। ব্যথা কমানোর জন্য ডাক্তারের পরমর্শানুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করতে হবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই একেবারে ভয় পাবার কোনো কারণ নেই।

আপনি আরও পড়তে পারেন

লবণ বেশি খাওয়ার মারাত্মক প্রভাব

ঘাড়ব্যথা দূর করতে যা করবেন

গোড়ালির ব্যথার কারণ ও প্রতিকার

মানবদেহের ঘাতক সিলিকনযুক্ত ফ্রিজ

হৃদপিন্ড সুস্থ থাকবেই এবার

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.