মরদেহের সঙ্গে এ কেমন কদর্যতা!

ভারতের আসাম রাজ্যে নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। এর পর তার প্রশাসনের অধীনে রাজ্যেটিতে সংখ্যালঘু মুসলিম ও বাংলাভাষীদের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। তবে উচ্ছেদের নামে সংখ্যালঘুদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ উঠেছে এরই মধ্যে। গত বৃহস্পতিবার এমনই এক অভিযানে পুলিশের গুলিতে দুই মুসলিম সংখ্যালঘু নিহত হয়। গুলিতে লুটিয়ে পড়া এক ব্যক্তির ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ এবং মরদেহের ওপর এক ফটোগ্রাফারের বার বার লাফানোর ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে এই বিভৎস দৃশ্য দেখার পর সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

সরকারি বাহিনী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষ

কাতার-ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাজ্যের দারাং জেলার সিপাজহার গ্রামে তথাকথিত এক উচ্ছেদ অভিযানে যায় পুলিশ। এই উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে পুরো এলাকা রণক্ষেত্র হয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশের গুলিতে সাদ্দাম হুসেন ও শেখ ফরিদ নামের দুই মুসলিম প্রাণ হারায়। এই ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়।

এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি লাঠি হাতে পালানোর চেষ্টা করছিল। পুলিশ তার বুক লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ওই ব্যক্তি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তখন  তাকে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য নির্বিচারে পেটাকে থাকে। এক পর্যায়ে সে নিস্তেজ হয়ে যায়। এর মধ্যেই সেখানে ঢুকে পড়ে বিজয় শঙ্কর বানিয়া নামের এক ফটোগ্রাফার। এ সময় সে জুতা পায়ে নিহত ওই মুসলিমের ওপর লাফিয়ে পড়তে থাকে।

মৃত আরেকজনকে নিয়ে যাচ্ছে আসাম পুলিশ

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ওই ফটোগ্রাফার পুলিশের সঙ্গেই ঘুরছিল এবং কথিত উচ্ছেদ অভিযানের ছবি তুলছিল। পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীরা তাকেও তাড়া করেছিল। পরে অবশ্য ওই ফটোগ্রাফারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

জানা যায়, এর আগে হাতি দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় গ্রামের ঘরবাড়ি। বৃহস্পতিবার দারাংয়ের সিপাজহার গ্রামেও রীতিমতো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উচ্ছেদ অভিযানে নামে পুলিশ। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছানোর পর এলাকার মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। প্রথমে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে পুলিশ। তাতেও বিক্ষোভকারীদের দমাতে না পেরে পুলিশ গুলি চালায়। এতে ওই দুইজনের মৃত্যু হয়। পুলিশ দাবি করছে, তারা ‘আত্মরক্ষা’ করতে গিয়ে যা প্রয়োজন তা-ই করেছে।

এ বিষয়ে আসামের সাংবাদিক এবং বরাক বুলেটিনের অন্যতম প্রধান অনির্বাণ রায় চৌধুরী জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে বলেন, যেভাবে পুলিশ গুলি চালিয়েছে, যেভাবে নিহত ব্যক্তির ওপর আক্রমণ হয়েছে, তা ভাষায় ব্যাখ্যা করা যায় না। এদিনের ঘটনা মুসলিম বিদ্বেষের কদর্যতা দেখিয়ে দিয়েছে। ওই হামলায় ৪৮০টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, যাদের থাকার কোনো জায়গা নেই। অথচ ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর টুইট দেখে মনে হচ্ছে, তিনি আনন্দিত!