কিউবাকে নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে পাকিস্তানের মন্ত্রী

কিউবাকে নিয়ে অসম্মানজনক মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েছেন পাকিস্তানের পরিকল্পনা ও বিশেষ উদ্যোগ বিষয়ক মন্ত্রী আহসান ইকবাল। পাকিস্তান মুসলিম লীগের (নওয়াজ) এই নেতা যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে আবোল-তাবোল বকছেন বলে সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা। তোপের মুখে পড়ে মন্ত্রী কিউবান রাষ্ট্রদূতকে ট্যাগ করে লিখেছেন, ২০০৫ সালে পাকিস্তানে ভূমিকম্পের পর কিউবার ডাক্তাররা যে বীরোচিত ভূমিকা রেখেছেন আমরা তা ভুলতে পারি না।

আহসান ইকবালের মন্তব্য ‘অসম্মানজনক’ বলে অভিহিত করেছেন কিউবার রাষ্ট্রদূত জেনের কারো

এর আগে রোববার লাহোরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় আহসান ইকবাল বলেন, পাকিস্তান একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হতে চায়। আমি চাই না, পাকিস্তান উত্তর কোরিয়া কিংবা কিউবায় রূপান্তরিত হোক। পাকিস্তানকে মালয়েশিয়া, তুরস্ক, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার পথে নিয়ে যেতে হবে।

আহসান ইকবালের এ মন্তব্যের পরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। পাকিস্তানের অনেকে মন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন এবং এর সঙ্গে পাকিস্তানি জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই বলে উল্লেখ করেন।

পাকিস্তানের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ও পিটিআই নেত্রী শিরিন মাজারি দীর্ঘ এক পোস্টে লেখেন- আমাদের বন্ধু ও গর্বিত রাষ্ট্র কিউবাকে অসম্মান করায় আহসান ইকবালের লজ্জা হওয়া উচিত। আমেরিকার দালাল হলেও একটা সীমারেখা থাকা উচিত। আমেরিকাকে খুশি করতে অন্য দেশকে অসম্মান করবেন না। মার্কিন বুলিংয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে কিউবার যে জাতীয়তাবাদী অঙ্গীকার, সেটা থাকলে আমরা অনেক ভাল করতাম। আমরা যদি কিউবার মতো জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারতাম, আমাদের জনগণ অনেক ভালো থাকতো।

আহসান ইকবালের বক্তব্যে তীক্ষ্ণ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইসলামাবাদে নিযুক্ত কিউবার রাষ্ট্রদূত জেনের কারো এক টুইটে লিখেছেন, ভাগ্য ভালো যে লাহোরে সংবাদ সম্মেলনে কিউবা সম্পর্কে মন্ত্রী আহসান ইকবালের অসম্মানজনক মন্তব্য পাকিস্তানি জনগণের মনোভাবের প্রতিনিধিত্ব করে না এবং এর সঙ্গে কিউবার প্রতি পাকিস্তানের মানুষের সত্যিকার সম্মান ও গভীর ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক নেই।

কিউবার রাষ্ট্রদূতের টুইটের জবাবে বিবিসির সাবেক সাংবাদিক আতহার কাজমি লেখেন, বিশ্বাস করুন রাষ্ট্রদূত, সাধারণ পাকিস্তানিরা কিউবার জনগণ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির প্রতি ব্যাপক শ্রদ্ধা পোষণ করেন। বর্তমান সরকারের নীতি যা-ই হোক না কেন, কিউবানদের মতো পাকিস্তানিরাও কোনো পরাশক্তির অধীন থাকতে চায় না।

জার্মান-আমেরিকান সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট কারিন জোধা ফিশার লিখেছেন, হায় হায়, তার উচিত ছিল শতভাগ স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারা পশ্চিম গোলার্ধের একমাত্র দেশ হিসেবে কিউবার পক্ষে কথা বলা। ইউরোপীয়রা সেদেশে যেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।

আহমাদ ওয়ারিশ নামে লাহোর কলন্দরের এক সমর্থক লিখেন, পাকিস্তানে ২০০৫ সালের ভূমিকম্পের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দিয়েছিল কিউবা। আমরা তা কখনো ভূলব না। আমরা দুঃখিত, রাষ্ট্রদূত। আহসান ইকবাল, আপনার জন্য লজ্জা।

পাকিস্তান মুসলিম লীগের সাবেক মহাসচিব মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, কেবল পশ্চিমা দেশগুলোকে খুশি করার জন্য আহসান ইকবাল ইচ্ছাকৃতভাবে কিউবা ও উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে অসম্মানজনক কথা বলেছেন। তার উচিত, দুই দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া।

আহসান ইকবাল তার মার্কিন প্রভুদের খুশি করতে কিউবার কথা বলেছেন- মন্তব্য করে পাকিস্তানি লেখক মীর মোহাম্মদ আলিখান লিখেছেন, এই গর্দভ কি কখনো কিউবা গেছে? তার পুরো দলের চেয়ে অনেক বেশি আত্মসম্মান রাখে কিউবার প্রতিটি মানুষ।

পিটিআইয়ের নারী উইংয়ের নেত্রী মুনেজা হাসান লিখেছেন, এই মন্ত্রী নিজেই একটা ভাঁড়। আমেরিকার চাপিয়ে দেওয়া এই সরকারের কথাবার্তা পাকিস্তানি জনগণের মনোভাবের প্রতিফলন নয়।

সাংবাদিক জেবুন্নেসা বারকি লিখেছেন, কেউ অনুগ্রহ করে আহসান ইকবালকে কিউবার ইতিহাস শেখান। এই মন্ত্রী কিউবাকে উত্তর কোরিয়া মনে করে। রেডিও পাকিস্তানের সাবেক ডিজি ও নয়াদৌড় মিডিয়ার নির্বাহী পরিচালক মুরতাজা সোলাঙ্গি লেখেন, কিউবার বীর জনগণের প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

আহসান ইকবালকে ক্ষমা চাইতে হবে জানিয়ে অ্যাক্টিভিস্ট আম্মার আলি জান লিখেছেন, কিউবা হচ্ছে প্রতিরোধ ও সংহতির প্রতীক। কোনো দূতাবাস না থাকা সত্ত্বেও ২০০৫ সালে ভূমিকম্পের পর কিউবা সর্বপ্রথম পাকিস্তানে ডাক্তার পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। গতবছর দেশটি আমাদের বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। আহসান ইকবালের উচিত, তার মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়া।

পাকিস্তানের সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী কিউবার রাষ্ট্রদূতকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, পাকিস্তানের বর্তমান সরকারকে যৌক্তিক কারণেই ‘আমদানিকৃত’ বলা হয়। মন্ত্রীর এই মন্তব্য দাস মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। পাকিস্তানের জনগণ মহান কিউবান জাতির প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধা পোষণ করে। আমি আহসান ইকবালকে তার মুর্খতার জন্য দুঃখপ্রকাশের আহ্বান জানাই।

ব্যাপক নিন্দা ও সমালোচনার মুখে মন্ত্রী আহসান ইকবাল কিউবান রাষ্ট্রদূতের টুইট ট্যাগ করে লিখেছেন, মান্যবর, কিউবার জনগণের প্রতি ও কিউবার সঙ্গে গভীর আন্তরিক সম্পর্কের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। ২০০৫ সালের ভূমিকম্পের পর কিউবান ডাক্তারদের বীরোচিত ভূমিকা আমরা ভুলতে পারি না। আমি কেবল পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছিলাম।