চলছে বর্ষাকাল। বৃষ্টির এই মৌসুমে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হন অনেকেই। বর্ষাকাল ডেঙ্গু জ্বরের জীবানুবাহী এডিস মশার প্রজননের সময়। বিশেষ করে বৃষ্টিপাতের সময় মশার ডিম পাড়া ও প্রজননের জন্য খুবই উপযুক্ত। মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস, বিশেষ করে গরম ও বর্ষার সময় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। আর ডেঙ্গু ভাইরাস থেকেই ডেঙ্গু জ্বরের উৎপত্তি।

dengue fever

এই ভাইরাসবাহিত এডিস নামক মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে চার ধরনের ভাইরাসজনিত ট্রপিক্যাল বা উষ্ণণ্ডলীয় রোগ। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল বিশেষ করে উপমহাদেশের ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চল, চীন, তাইওয়ান, প্রশান্ত মহাসাগরের ক্যারাবীয় দীপাঞ্চল, আফ্রিকা এবং মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়।

ডেঙ্গু জ্বর প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে। (ক) ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভার। (খ) হেমোরেজিক ফিভার। হেমোরেজিক ডেঙ্গু ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুর তুলনায় বেশি মারাত্মক হয় এবং সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না হলে রোগী মৃত্যুবরণ করতে পারে।

  • ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু- সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরে এক সপ্তাহের মধ্যে জ্বর কমে গিয়ে গায়ে হামের মত রেশ হতে পারে।এই ধরণের ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয় বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে। অনেক সময় ব্যথার তীব্রতা এতো বেশী থাকে মনে হয় হাঁড় ভেঙে যাচ্ছে। তাই একে ‘ব্রেক বোন ফিভারও’ বলে। এ ছাড়া মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, বমি বমি ভাব এমনকি বমি হতেও পারে। রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং রুচি কমে যায়।

  • হেমোরেজিক ডেঙ্গু- হেমোরেজিক বা রক্তক্ষয়ী ডেঙ্গু খুব কম হয়ে থাকলেও এটি মারাত্নক। সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরনাপন্ন না হলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। সাধারণ বা ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো ছাড়াও আরও বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত, কফের, বমি, পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত বের হওয়া। চোখের মধ্যে এবং বাইরেও রক্ত পড়তে পারে। মেয়েদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা শুরু হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে পারে। অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি, জন্ডিস, কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরে করণীয়

সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত পর্যাপ্ত বিশ্রামে থাকা জরুরি। স্যুপ, দুধ, তাজা ফলের রস, পানি, শরবত, ডাবের পানির মত তরল জাতীয় খাবার অধিক পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। মুখে খেতে না পারলে স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে। জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল-জাতীয় ব্যথার ওষুধই যথেষ্ট। কোনভাবেই এসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক-জাতীয় ব্যথার ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না। মাঝে মাঝে ভেজা কাপড় দিয়ে গা মুছিয়ে দেয়া যেতে পারে। এক সপ্তাহের মধ্যে জ্বর না কমলে অথবা রক্তক্ষয়ী ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

একমাত্র এডিস মশার বিস্তার রোধ করলেই ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করা সম্ভব। আশপাশের ঝোঁপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোথাও যাতে পানি জমে থাকতে না পারে। এমনকি অ্যাকুয়ারিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ারকন্ডিশনারের নিচেও যেন পানি জমে। ঘরের দরজা-জানালায় নেট লাগাতে হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

গরমে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়

এই গরমে সুস্থ থাকতে

ঘামাচির প্রকারভেদ ও প্রতিকার

ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে...

গেঁটেবাত থেকে মুক্তি পেতে

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.