চীনের হেনান প্রদেশে অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় কমপক্ষে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রদেশটির রাজধানী ঝেংঝউতে পাতাল রেলে ১২ জনের মৃত্যু ঘটেছে। খবরে বলা হচ্ছে, ঝেংঝউ থেকে দুই লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব এলাকা মূলত শিল্প ও যানবাহন চলাচলের কেন্দ্র। এখানে রেল ও রোড লিঙ্ক বিস্তর ক্ষতিগ্রস্ত ও ধংস হয়ে গেছে। নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে গেছে, নদী কিংবা জলাধার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হাজার হাজার সেনা উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে।
789101213চীনের হেনান প্রদেশের ঝেনঝউ সিটি ‘আইফোন শহর’ হিসেবে খ্যাত। পুরো শহর জলমগ্ন হয়ে পড়ায় স্থানীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্তব্ধ হয়ে গেছে। আর এর প্রভাব পড়তে পারে সেখানকার আইফোন উৎপাদনেও। প্রতিদিন গড়ে এই শহরে তৈরি হয় ৫ লাখ আইফোন। কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন মডেল বাজারে আনার কথা ছিল আইফোনের। এ উপলক্ষে সেখানে সম্প্রতি উৎপাদনও বাড়ানো হয়। এখন এই বন্যায় পুরো পরিকল্পনায় আক্ষরিক অর্থেই পানি পড়েছে।
তবে শুধু আইফোনই নয়, চীনের খাদ্য সরবরাহেও প্রভাব ফেলতে পারে এই বন্যা। কারণ পুরো চীনের গম উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশই আসে হেনানের এই শহর থেকে। এই বন্যার কারণে খাদ্যশস্যের ক্ষতি হলে তা পুরো দেশের খাদ্য সরবরাহকেও বিঘ্নিত করতে পারে।
জানা যাচ্ছে, একটি পাতাল রেলস্টেশনে পানি ঢুকে কমপক্ষে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেখান থেকে ৫০০ জনকে উদ্ধার করেছে রেসকিউ টিম। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, অন্ধকারের মধ্যে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন বুক পানিতে ডুবে আছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন উদ্ধারকারী লিখেছেন, পানি আমার বুক পর্যন্ত। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কারণ আমার অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। বেইজিং দক্ষিণাঞ্চলের গুয়োতে বসবাসকারী এক ব্যক্তি যিনি অফিসে রাত কাটাতে বাধ্য হয়েছেন, তিনি বলছেন, বৃষ্টিতে ৬৫০ কিলোমিটার সড়ক পথ ডুবে গেছে। শহরের ১২ মিলিয়ন লোক আটকে পড়েছে।
তিনি রয়টার্সকে বলেন, সড়কপথে যাত্রা বন্ধ হওয়ায় হাজার হাজার যাত্রী ওই পাতাল ট্রেনে চড়েছিল। এ কারণে তারা ভয়াবহ দুর্বিপাকের শিকার হয়েছে।
সরকারি সূত্রে ২৫ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন ৭ জন। মৃতরা অধিকাংশ ঝেংঝউয়ের গঙ্গি শহরের বাসিন্দা। ভয়াবহ বৃষ্টিতে তাদের বাড়িঘর স্থাপনায় ধস নেমেছে। স্কুল-কলেজ এবং হাসপাতালগুলো অচল হয়ে পড়েছে। পাশের হেবেই প্রদেশেও ঝড়ের পুরবাভাস রয়েছে।
হেনানে আগামী তিন সপ্তাহ ধরে বৃষ্টিপাত হওয়ার পূরবাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। উদ্ধার কাজে সরকার ৫৭ হাজার সেনা ও উদ্ধারকরমি মোতায়েন করেছে। সরকারি বেসরকারি সেবা সংস্থাগুলো আক্রান্ত এলাকার মানুষকে খাদ্যসহ নানা সহায়তা দিচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, গত শতবর্ষেও এমন বন্যা দেখা যায়নি হেনানে। এ পরিস্থিতিকে সঙ্কটজনক আখ্যা দিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বন্যা নিয়ন্ত্রণে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।